তেলের গাড়ি নসিমনে হতো পরিবেশ দূষণ। সঙ্গে ছিল দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। তেল খরচও কম ছিল না। এখন যে গাড়ি তাতে আর এসব ভয় নেই। গাড়ি চালাতে তেলের পরিবর্তে খাবারের জন্য গুণতে মাত্র দুই-আড়াইশ টাকা। ঝাঁজালো আওয়াজও নেই, রয়েছে উপভোগ্য টগবগ টগবগ শব্দ। ঠেলা কিনে তার সঙ্গে ঘোড়া জুড়ে দিয়েই তৈরি করেছেন মালটানার এই গাড়ি। নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী পৌর শহরের আইসক্রিম ফ্যাক্টরি এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে ইব্রাহীমের এই সুচিন্তা অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। এ থেকে আয় দিয়ে ভালোই কাটছে তার জীবিকা।
নরসিংদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি তেলের পাম্পের সামনে দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ইব্রাহীমের। তিনি বলেন, করোনার কারণে দিন মজুরদের আয়রুজি কমে গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ফলে তার আগে যে নসিমন ছিল তার ব্যয় বহন করতে পারছিল না তারা। ফলে প্রভাব পড়ে নিজের আয়ে। কষ্টে যাচ্ছিল তারও। এদিকে নসিমন চলত তেলে। তেল পুড়ে পরিবেশ দূষিত হতো। আর শব্দও ছিল বেশ। ঘোড়ার গাড়িতে এসব নেই। দিব্যি চলে যাচ্ছে তার।
ইব্রাহীম বলেন, শিবপুর উপজেলা পুঁটিয়া বাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে মাল টানার পরিকল্পনা করি। পরে আরও ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঠেলাগাড়ি কিনি। ঠেলার সঙ্গে জুড়ে দিই ঘোড়া। তৈরি হয়ে যায় মালবাহী ঘোড়ার গাড়ি। এখন ওই গাড়িটি দিয়ে মানুষে বিভিন্ন মিল-কারখানার মালামাল বহন করি।
এতে প্রতিদিন মাধবদী ও আশপাশের এলকায় মাল বহন করে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হচ্ছে। পরিবারে স্ত্রী ও ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান নিয়ে মোটামুটি সুখেই আছি। তিনি জানান, ঘোড়াকে দৈনিক দেড়-দুইশ টাকার খাবর দিলেই চলে।
মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা ছড়াকার ও সাপ্তাহিক খোরাক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম খোকন বলেন, এই প্রযুক্তির যুগকে হার মানিয়ে পুরনো ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে ইব্রাহীমের জীবিকা নির্বাহ দেখে অনেকেই উজ্জীবিত হবে। এমনই পরিবেশবান্ধব কর্মপরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হবে বলে আমার বিশ^াস। এতে শুধু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবিকাই শুধু না, আমাদের পরিবেশও সৌন্দর্যমন্ডিত হবে।
খন্দকার শাহিন,জেলা প্রতিনিধি দৈনিক খোলা কাগজ।