সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, জীবন যাপন ব্যায়, দ্রব্যমূল্য, মূদ্রাস্ফীতিসহ নির্দিষ্ট মানদন্ড বিবেচনায় চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির নামে চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশিও চা সংসদ এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এম.ও.ইউ) স্বাক্ষরের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের চর্চা করলেও নেতৃত্বের অদক্ষতা আর দুর্বলতার কারণে কখোনই চা শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য বা মানবিক মজুরি আদায় করতে পারেনি। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (অদ্যবধি সংশোধিত) এর ১৩৯ (৬) ধারা অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পর সরকার গঠিত জাতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুণঃনির্ধারণ করবে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডে চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট শিল্পের শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধি ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং একজন নিরপেক্ষ সদস্য থাকে। ফলে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনায় অন্যান্য শিল্প সেক্টরের মজুরির সাথে তুলনামূলক আলোচনা এবং মালিকদের উপর জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের চাপ তৈরীর সুযোগ থাকে। কিন্তু, দ্বিপাক্ষিক দরকষাকষিতে নিজেদের অদক্ষতা স্বত্ত্বেও কোন অদৃশ্য কারনে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে মজুরি নির্ধারণের দাবি তোলেনা।
ফলে ইউনিয়নের নেতৃত্বের বাইরে চা শ্রমিকরা নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। চা শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ১১ বছর পর চা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম চলা অবস্থায় চা শ্রমিকদের সকল দাবিকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশিও চা সংসদ ১৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি মাত্র ১৮ টাকা বৃদ্ধি করে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যে সময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্ব ১২০ টাকা মজুরির চুক্তি স্বাক্ষর করল সেই সময়ও চা বাগানের বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও ভ্যালি নেতৃবৃন্দ দৈনিক নগদ মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছিল। অর্থাৎ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মজুরি বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় স্থানিয় নেতৃত্ব ও সাধারণ চা শ্রমিকদের যুক্ত করেনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন জাগে যে, সুনির্দিষ্ট মানদন্ডে বিচার করে মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে পাশ কাটানোর জন্যই কি এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর তারপর এই নতুন চুক্তির দোহাই দিয়ে কি সেটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি বোর্ডের সুপারিশ তৈরী করা হবে? অথচ এই চুক্তি স্বাক্ষরের একদিন পূর্বেই সরকার কর্তৃক দিন মজুরদের দৈনিক মজুরিও ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিন মজুরদের দৈনিক মজুরি নিম্নতম ৬০০ টাকা হলে রপ্তানিমুখি শিল্প চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি মাত্র ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হলো কোন মানদন্ডে?
নেতৃবৃন্দ, মজুরি নির্ধারণের মনদন্ড সুনির্দিষ্ট করে সেই মানদন্ডের ভিত্তিতে চা শ্রমিকদের জন্য মজুরি ঘোষণা করতে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি জোর দাবি জানান। আর ন্যায্য মজুরি, ভূমির অধিকারসহ ন্যায্য অধিকার সমূহ আদায়ের লড়াই কে শক্তিশালী করতে সুবিধাবাদি নেতৃত্ব কে বর্জন করে শ্রেণী সচেতন-আদর্শিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চা শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান।