ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে ডেসটিনি ব্যবসা অনুসরণ করে অনলাইনভিত্তিক প্রতারণামূলক ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ১০ মাসে মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৮টি সদস্যদের আইডি থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান, নির্বাহী অফিসার মো. জসীম, ম্যানেজার (হিসাব) মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রডাক্টস) মো. তানভীর আহম্মেদ, সহকারী ম্যানেজার (প্রোডাক্টস) মো. পাভেল সরকার ও অফিস সহকারী নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ। রাজধানীর কলাবাগান থানার এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মূলহোতা আলামিন প্রধান ও মো. জসীমকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড’ নামের এই কোম্পানি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান একসময় ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এ সক্রিয় ছিল। ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা শুরু করে। ১০ মাসে তারা সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৮টি সদস্যদের আইডি থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, ‘তাদের ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন আ্যপ ভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় ৫ লাখ সদস্য রয়েছে।’
যেভবে প্রতারণা করতো তারা: তারা কোম্পানির ওয়েবসাইট http://main.spcworldexpress.com, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে সাধারণ মানুষকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীরা গুগল প্লেস্টোর থেকে একটি মোবাইল আ্যপ ডাউনলোড করে রেজিষ্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক আগের রেজিস্ট্রেশনের আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে বিকাশ, নগদ, রকেট নম্বরে একাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২০০ টাকা দিতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) এর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।
পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন: যে রেফার করবে সে তার নিচের তিনটি আইডি থেকে ৪০০ টাকা করে কমিশন লাভ করবে। এরপর ওই তিনটি আইডি থেকে যখন ৩x৩=৯ আইডি হবে তখন আপলিঙ্কের আইডি ২০ শতাংশ কমিশন পাবে। এরপর ডাউনলিংকের যত আইডি হবে তার আইডি ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাবে। যা মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশের আইনের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এলএমএল ব্যবসা আড়াল করার কৌশল: কোম্পানিটি নামে মাত্র কয়েকটি পণ্য যেমন- অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি শুধুমাত্র তাদের রেজিস্টার্ড সদস্যদের কাছে বিক্রি করে থাকে। তার লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে দেয়ার কথা বলে। গ্রেফতারকৃতরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করার যে তারা ই-কমার্স করছে।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুটি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ৬টি ল্যাপটপ, দুটি রাউটার, দুটি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।