নরসিংদীর বেলাবতে মসজিদ নিয়ে দু-পক্ষের মতবিরোধের সমাধান হয়নি দীর্ঘ এক বছরেও । চলছে ধারাবাহিক হামলা সহ উভয় পক্ষ থানায় করেছে মামলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে ওই উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদ পূর্ব পাঁড়া গ্রামে পাশাপাশি দুটি মসজিদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের মধ্যে এ দ্বন্ধ। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে কিছুদিন পরপর সংঘঠিত হচ্ছে ভয়াবহ সংঘর্ষ। আহত হয়েছে উভয় পক্ষের নারী পুরুষ সহ প্রায় ১৫ গ্রামবাসি। একাধিক গ্রাম্য সালিশের পাশাপাশি আদালত ও থানায় উভয় পক্ষ দায়ের করেছে একাধিক মামলা মোকাদ্দমা। প্রতিদিনই এ এলাকায় উক্ত মসজিদ দুটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসি। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলতে থাকা এ সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।
স্থানীয়রা জানান, বিন্নাবাইদ পূর্ব পাঁড়া গ্রামের প্রায় একশ পঞ্চাশ বছরের পুরাতন একটি মসজিদ ভেঙ্গে পূর্ণ নির্মানের উদ্যোগ নেন বিন্নাবাইদ গ্রামে মানিক মিয়া নামে এক সৌদী প্রবাসী। কিন্তু পুরাতন মসজিদের জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত বিধায় ও ওয়ারিশ সংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় একই গ্রামের একটি পক্ষ পুরাতন মসজিদটি পূনঃনির্মান করতে অনিচ্ছুক। তাদের দাবী মসজিদের জায়গাটি মসজিদের নামে ওয়াকফা করে দিতে হবে। কিন্তু মনিরুজ্জামান মনির মাষ্টার নামে এক ব্যক্তি তার দলবল নিয়ে তা করতে অস্বীকার করলে তাতে সৃষ্টি হয় সমস্যার।
এ কারনে এলাকার হাবিবুর রহমান,তারা মিয়া,বাদল মিয়া সহ উক্ত গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক পুরাতন মসজিদের হতে প্রায় ১০০ ফিট দুরে আরেকটি মসজিদ তৈরী করে।
অপরদিকে মসজিদের ১১ শতাংশ জায়গা একই গ্রামের মনিরুজ্জামান নামে এক স্কুল শিক্ষকের নামে রেকর্ড করা। তিনি বর্তমানে উক্ত পুরাতন মসজিদ ভেংগে ফেলায় মুসুল্লিদের সুবিধার্থে পাশেই একটি টিন নির্মিত ছাপড়া ,মসজিদ তৈরী করেন। এ নিয়ে বাদল গ্রুপ ও মনির মাষ্টার গ্রুপের মধ্যে চলছে দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষ। গত রমজানের শবে-কদরের রাতে বাদল গ্রুপ মনির মাষ্টারের বাড়ির মসজিদের তাদের জায়গা রয়েছে দাবী করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে। এসময় টিনের ছাপড়া মসজিদটি ধারালো দা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ অক্টোবর পূণরায় বাদল গ্রুপের ও মনির মাষ্টারের গ্রুপের লোকজনের মধ্যে পূণরায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মনির মাষ্টার গ্রুপের আনোয়ার(৪৫),জেসমিন(২৫),বিলকিছ(৩০),জুমা(৫),ও উর্মি(১০) নামে ৫ নারী পুরুষ আহত হয়। অন্যদিকে বাদল গ্রুপের তারা মিয়া(৬৫),বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন(২৫),সোহাগ(১৬),আলমগীর(৪০) নামে ৪ জন আহত হয়। উভয় গ্রুপের গুরুতর আহতদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল সহ বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা হয়েছে উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে মামলা।
বর্তমানে উক্ত ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। এলাকায়বাসি ও উভয় গ্রুপ আশংকা করছেন পূণরায় সংঘঠিত হতে পারে এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ। এলাকার সচেতন মহল বলছেন কিছুদিন পরপর নামাজরত অবস্থায় মসজিদে হামলা করা ও মসজিদ ভাংচুর করা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় আমরা সুষ্ঠ সমাধান চাই।
বাদল গ্রুপের প্রধান বাদল মিয়া জানান,১১ শতাং জায়গার উপর যে পুরাতন মসজিদটি অবস্থিত। সেটা মনির মাষ্টার নিজের দাবি করলেও সেটা আমাদের পূর্ব পুরুষদের ওয়ারিশ আছে।। এ ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মনির মাষ্টার জোড়পূর্বক সেখানে মসজিদটি পূর্ণ নির্মান করছে।
মনির মাষ্টার গ্রুপের নজরুল মিয়া জানান,পুরাতন মসজিদের জায়গায় তারা যদি জায়গা পায় তাহলে আমরা সব জায়গা দিয়ে দিব। কিন্তুু বর্তমানে কিছুদিন পরপরই তারা মসজিদ ও আমাদের উপর হামলা করে। তারা দুষ্ট চরিত্রের লোক। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা তাদের অত্যাচার হতে বাঁচতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ জানান,প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো একটি মসজিদের পাশে আরেকটি পক্ষ নতুন আরেকটি মসজিদ তৈরী করা নিয়ে মূলত এ ঝগড়া। তবে মসজিদ হচ্ছে পবিত্র স্থান আল্লার ঘর। এখানে কোনরকম সংঘর্ষ করা উচিত নয়।
বেলাব থানার ওসি মোঃ সাফায়েত হোসেন পলাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,এ ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।