নরসিংদী শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে শান্তা আক্তার (৩১) নামে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও আশা) এক নারী কর্মীর হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন ও ছিনতাই ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১১। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর মাধবদী বাসস্ট্যান্ড ও নরসিংদী শহর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব ১১ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মামলার প্রধান আসামী রুবেল মিয়া (২৬) ও আব্দুল বাদশা মিয়া (২২) এবং তাদের দুই নারী সহযোগী মাহাবুবা আক্তার মেরিনা (২২) ও মিঠি বেগম (২৬)। এসময় তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইয়ের নগদ ১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা, ০১টি গেঞ্জি, ০১টি ক্যাপ ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র্যাব জানায়, এনজিও আশার লোন অফিসার শান্তা আক্তার ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়া এলাকা থেকে ঋণের কিস্তির টাকা আদায় করে শহরের বাজিড় মোড়ের অফিসে ফিরছিলেন। এসময় মোঃ রুবেল মিয়া ও আব্দুল বাদশা মিয়া পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম কান্দাপাড়াস্থ সরকারী মহিলা কলেজের সামনে ওৎ পেতে থেকে এনজিও কর্মীর রিক্সার গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে টাকা ভর্তি ভ্যানিটি ব্যাগ রুবেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন এনজিও কর্মী তার টাকার ব্যাগটি ধরে রাখতে চাইলে তার সহযোগী বাদশা তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে এনজিও কর্মী শান্তার বাম হাতের কব্জিতে স্বজোরে কোপ দিলে তার কব্জি কেটে যায়। পরে তাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনতাই করে দৌড়ে পালিয়ে নরসিংদী শহরের ব্রাক্ষণপাড়ায় রুবেলের শ্বশুর বাড়ীতে আত্মগোপন করে থাকে। তারা উক্ত বাসায় এনজিও কর্মীর ভ্যানিটি ব্যাগটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলে।
র্যাব আরও জানায়, ঘটনাস্থলের পাশের সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া উক্ত ছিনতাইয়ের দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। উক্ত ঘটনায় আশা এনজিও কর্মীর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইসমাইল শিকদার বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় একটি দস্যুতা মামলা দায়ের করেন। এরপর গোয়েন্দা নজরদারী ও গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুই ছিনতাইকারী রুবেল ও বাদশাকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে তিনটায় মাধবদী থানাধীন খাদিমাচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের নারী সহযোগী মাহাবুবা আক্তার মেরিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার হেফাজত হতে ছিনতাইয়ের নগদ ১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে নরসিংদী শহরের ব্রাক্ষণপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর সহযোগী মিঠি বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার হেফাজত হতে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত রুবেলের পরিহিত ০১টি গেঞ্জি, বাদশার মাথায় পরিহিত ০১টি ক্যাপ ও ছিনতাইকৃত মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রুবেল মিয়া ও আব্দুল বাদশা মিয়া উক্ত এনজিও কর্মীর হাতের কব্জি কাটা ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই পেশাদার ছিনতাইকারী এবং বিভিন্ন অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। তাদের মধ্যে রুবেলের নামে ৪টি, বাদশার নামে ৮টি এবং মিঠি বেগমের নামে ২টি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব ১১।