স্পোর্টস ডেস্ক:
আজ থেকে ঠিক ৪৪ বছর আগে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা শুরু। ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি প্রয়াত শামিম কবিরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম ক্রিকেট খেলতে নামেন। অভিষেক ঘটে টাইগার ক্রিকেটের। ঢাকায় মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলতে নামে টাইগাররা। সেদিনই প্রথমবারের মতো কোনো দলের বিপক্ষে ‘বাংলাদেশ’ নামে খেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা।
ম্যাচটা ছিল পরীক্ষার মতো। বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলাটা পারে কি না, সেই পরীক্ষা। এই দলটার সঙ্গেই এর আগে রাজশাহী এবং চট্টগ্রামেও দুটি ম্যাচ হয়। তবে সেখানে ‘বাংলাদেশ’ নামে নয় আঞ্চলিক নামে খেলে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম ম্যাচে ছিলেন- শামিম কবির (অধিনায়ক), রকিবুল হাসান (সহ-অধিনায়ক), শফিকুল হক হীরা, মাইনুল হক, ওমর খালেদ, এ এস এম ফারুক, সৈয়দ আশরাফুল হক, ইউসুফ রহমান বাবু, দৌলতুজ্জামান, দিপু রায় চৌধুরী ও খন্দকার নজরুল কাদের লিন্টু।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বলটি খেলেছিলেন রকিবুল হাসান। তার কথায় এখনো জীবন্ত ১৯৭৭ সালের সেই স্মৃতি, ‘৭ জানুয়ারিতে শুরু সে ম্যাচে আমরা প্রতিষ্ঠিত করলাম যে আমরা খেলাটা খেলতে পারি। মাঠভর্তি দর্শক ঢোল-বাদ্যি নিয়ে উপস্থিত। আমরা প্রমাণ করেছি এখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ছিল। প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিল।’
বাংলাদেশ নামে প্রথম ম্যাচ। সেই ম্যাচ নিয়ে কতই না ঘটনা! দলের মূল দুই পেস বোলারের স্পাইক ছিল না। প্রয়াত পেসার দৌলতুজ্জামান ও বাঁহাতি পেসার দিপু রায় চৌধুরী ঢাকা শহর চষে ফেললেন স্পাইকের জুতো খুঁজতে গিয়ে। ঢাকায় তখন খেলার সরঞ্জামের দোকান খুব বেশি ছিল না। আর কোনো উপায় না পেয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাদা জুতা কিনে ফেলেন দুই পেসার। পুরান ঢাকায় ফুটবলের বুটের দোকানে গিয়ে সেই জুতায় স্পাইক লাগিয়ে এমসিসির বিপক্ষে খেলতে নামেন দিপু রায় ও দৌলতুজ্জামান।
বাংলাদেশের ক্রিকেট তখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। স্বাভাবিকভাবেই তখনকার বাংলাদেশের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের ক্রিকেটারদের জন্য তেমন কিছু করার সামর্থ্য ছিল না। এমনকি পোশাকের ব্যবস্থাটাও ক্রিকেটাররা নিজ উদ্যোগে করেছেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে অবশ্য ম্যাচের আগে সবাইকে একটি করে ব্লেজার দেওয়া হয়। ক্রিকেটাররা তাতেই খুশি ছিলেন।
দিপু রায় বলছিলেন, ‘আমাদের ২৫ টাকা করে দিত। আমি ফাস্ট বোলার, আমার তো এক বেলাতেই ২৫ টাকা শেষ হয়ে যেত। তবে এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতাম না। আমরা খেলতাম ভালোবাসা থেকে।’
প্রথম বাংলাদেশ দলটাকে দেশের মানুষও কম ভালোবাসা দেয়নি। পূর্বাণী হোটেল থেকে ঢাকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত পথটিতে মানুষের ভিড় লেগে থাকত ক্রিকেটারদের একনজর দেখার জন্য। খেলোয়াড়েরা কেউ হোটেল থেকে মাঠে হেঁটেই চলে আসতেন। কারও ব্যাগ ভারী থাকলে আসতেন রিকশায়।
দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শফিকুল হক ঐতিহাসিক সে ম্যাচ নিয়ে খুলে দিয়েছেন স্মৃতিচারণ করলেন। জানিয়েছেন, ‘হোটেল থেকে মাঠে আসার পথটা এখনো মনে আছে। স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমে তখন বলতে গেলে কিছুই ছিল না। আমাদের খেলার সরঞ্জাম খুব ভালো ছিল না। বল প্যাডে লাগলে পায়ে ব্যথা করত। উইকেটকিপিং গ্লাভসেও অনেক অসুবিধা ছিল।’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক স্মৃতির ওপরই হয়তো ধুলোর আস্তরণ জমে। তবু ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে জন্মদিন তো আর মুছে যায় না। সাকিব-তামিম-মুশফিকদের যে বাংলাদেশ দলকে এখন গোটা বিশ্ব চেনে, সেই বাংলাদেশ দলের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।