নরসিংদীর বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমসের জামান ভূঁইয়া রিটনের বিরুদ্ধে ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্মানী ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা আত্মসাত সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই অভিযোগে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এই চিঠির উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সমসের জামান ভূঁইয়া রিটন নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, চারজন ভাইস-চেয়ারম্যান ও অন্যান্য অফিসার সহ কুমিল্লার তিনি ফেনীতে এক ট্রেনিংয়ে ছিলাম। আর ওই ট্রেনিংটা ছিলো ওই মাসের ৩০ থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু আমার বাড়িতে ওরশ দেইখা ডিসেম্বরের ১ তারিখে আমি চলে আসি। তারপর ৩ তারিখ আমার সিএ আমাকে ১০টি এক চেক দেয় এর মাঝে ভাইস-চেয়ারম্যানদের চেক ছিলো। তাদের টাকা উত্তোলন করার পর পরিশোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেই,কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কারনে আমার খামখেয়ালি হয়ে যায়। এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন যা সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক।
তবে অভিযোগকারি পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জাহাঙ্গীর ও নারী ভাইস-চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদা নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব নতুন ফন্দি করতে চাচ্ছেন। আমারদের রানৈতীক কোন বিরোধ নাই, একাধিকবার টাকা চাইলেও আমাদের সন্মানী ভাতা দেননি তিনি। উল্টো হুমকি ধামকি দিয়ে টাকার কথা অস্বীকার করেন। পরে আমারা সম্মিলিত ভাবে ছয় মাস পর এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করি।
তারা আরও বলেন, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর নরসিংদী সার্কিট হাউজে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্ম-সচিব) খান মো. নুরুল আমিনের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্মানী ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা আত্মসাতের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তারা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার, অভিযোগকারী, উপজেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, তারা প্রতি মাসের ৩/৪ তারিখে সোনালী ব্যাংক বেলাব শাখা থেকে নিজেদের সম্মানী ভাতা উত্তোলন করেন। ২০১৯ এর নভেম্বরের মাসিক ভাতা ২৭ হাজার, ভ্রমণ ভাতা ৮ হাজার এবং আপ্যায়ন ভাতা পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যানের ৪ হাজার ৪২১ টাকা ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের ৪ হাজার ৩৬৬ টাকার চেক যথারীতি অফিস সহকারী তৌফিক আফ্রাদের নিকট চাইলে তিনি জানান- উপজেলা চেয়ারম্যান পুরো চেক বই তার কাছ থেকে নিজের হেফাজতে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি চেয়ারম্যান আমাদের টাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনিও চেয়ারম্যানকে দ্রুত সুরাহা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিষয়টি কোনো সুরাহা হয়নি। এ ঘটনায় দ্রুত আইনগত সুরাহা চেয়ে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদার প্যাডে দুজনই স্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার কাছে অভিযোগের অনুলিপি দেন তারা।
এদিকে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের পর গত ১৮ জানুয়ারি ২০২১ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা শাখা-২ এর উপ-সচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়, দুই ভাইস-চেয়ারম্যানের সম্মানীর প্রায় সাড়ে ৭৪ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে- যা উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন। কেন আপনাকে (উপজেলার চেয়ারম্যান সমসের জামান ভূঁইয়া) পদ থেকে বরখাস্ত করা হবে না- তা আগামী ১০ কার্যদিবসের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
…
খন্দকার শাহিন । নরসিংদী প্রতিদিন-