♠ নরসিংদীর জেলা প্রসাশক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর দৃষ্টান্ত; মীম ও রত্নার জন্য জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে এবং মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মাধবদী পৌর শহরের বড় মসজিদ রোডের ইসলাম প্লাজায় “ত্রিনয়ন রূপশিল্প” নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী রূপচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। এ বিউটি পার্লাটি সকল নারীদের গড়ে তোলা হয়।
কিভাবে হলো মাধবদীতে “ত্রিনয়ন রূপশিল্প”
তৃতীয় লিঙ্গের রত্না শেখের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে ও মীম আক্তারের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার কিসমত বানিয়াদী গ্রামে। প্রায় ১১ বছর আগে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি থেকে বের হন মীম আক্তার। পরে কিছুদিন ঢাকায় অবস্থানের পর অবৈধ পথে ভারতে চলে যায় মীম। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় মুন্সীগঞ্জের রত্নার সঙ্গে। এরপর সেখানে রূপচর্চার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তারা। পরে মীম আক্তার রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে নরসিংদীর নিজ বাড়ি ফিরলেও সামাজিক ও পারিবারিক নেতিবাচক দৃষিভঙ্গি আরও বেড়ে যায়। এতে আবারও বাড়ি ছাড়া হয়ে বাড়ি বাড়ি টাকা তোলা ও অসহায় জীবনযাপন শুরু হয় তাদের। মীম এর পরিবার সহ সমাজ তাদের মেনে নিতে নারাজ ছিলো। এক পর্যায় তাদের জীবনকা নিয়ে চরম সংকটরে পরে যায়। তারা সমাজের গ্লানী থেকে বাচাঁর জন্য ছুটেন দিকবেদিক। হঠাৎ একদিন রাতে রত্না ও মীমকে সমাজের লোকজন পাকড়াও করে। পরে ওই রাতে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। পর সকালে মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল-আমিন সরকার সাথে রত্না ও মীম খুলে বলেন তাদের জীবন কাহিনী।
মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার তৃতীয় লিঙ্গের মীম ও রত্না সদর উপজেলা ও নরসিংদী জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। পরে তাদের কর্মদক্ষতা দেখে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। পরে মীম ও রত্নার জন্য জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে এবং মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মাধবদী পৌর শহরের বড় মসজিদ রোডের ইসলাম প্লাজায় “ত্রিনয়ন রূপশিল্প” নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী রূপচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। সোমবার (২৫ জানুয়ারী) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপচর্চা কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।
মাধবদী পৌরসভার হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক জানান, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে সরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এটিই প্রথম রূপচর্চা কেন্দ্র (বিউটি পার্লার)। নরসিংদীতে সর্বমোট ২০২জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি রয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, পর্যায়ক্রমে সকলকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে। সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনকে মানুষ বিবেচনায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
এসময় অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মীম আক্তার বলেন, সবচেয়ে খারাপ লাগার বিষয় হলো পরিবারের অবহেলা। এই অবহেলা সহ্য করতে না পেরে গুরুজীর আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলাম। ভারতে গিয়ে পার্লারের কাজও শিখি, পরে এখানে এসে কাজ পাচ্ছিলাম না।
রত্না শেখ বলেন, কাজ শিখেও কাজ পাচ্ছিলাম না। পরিবার থেকে শুরু করে সবখানেই শুধু অবহেলা আর অবহেলা। মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকতের ভাইদের সহায়তায় আমরা আজ জেলা প্রশাসকের সহায়তায় এখন পারলার পেয়েছি,আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমরা অনেক আনন্দিত।
রূপচর্চা কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার, উপজেলা সহকারী (ভূমি) শাহ্ আলম মিয়া, নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোতালিব পাঠান, নরসিংদী জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি একে ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল পারভেজ মন্টি, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির, মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল-আমিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহিন,কোষাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া বাচ্চু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা বেগম প্রমুখ।