আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
শিক্ষাই পারে কুসংস্কারকে দূর করতে। শিক্ষার আলো মুছে দেয় মনের সকল অন্ধকার। কিন্তু এ কথাকেই এবার মিথ্যে প্রমাণ করলো ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরের একটি নারকীয় ঘটনা। নিজেদের দুই মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করল তথাকথিত ‘উচ্চশিক্ষিত’ মনে সম্পূর্ণভাবে কুসংস্কারচ্ছন বাবা-মা।
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরের এই ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুরো রাজ্য জুড়ে। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ঘটে এই জোড়া হত্যার ঘটনা।
চিত্তুরের মদনপল্লে ব্লকের আঁখিশেত্তিপল্লে গ্রামের শিবনগর কলোনিতে ঘটনাটি ঘটেছে। ইতিমেধ্যই হত্যাকারী বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ কি, তা জানার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পুরো পরিবারই উচ্চশিক্ষিত। সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অভিযুক্ত পিতা মাল্লারু পুরুষোত্তম নাইডু। ওই দুই মেয়ের মা পদ্মজাও, আঙ্কে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ও একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক।
বাবা, মায়ের হাতে খুন হওয়া বড় মেয়েটি ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণী লকডাউনের সময় বাড়ি চলে আসেন ও আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বছর তেইশের ছোট মেয়ে এমবিএ করার পর এআর রেহমান অ্যাকাডেমিতে গান শিখছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে কিছুদিন আগেই শিবনগরের বাড়িতে আসে পরিবারটি। আঞ্চলিক সূত্রে খবর পুরো পরিবারই অত্যন্ত ধর্মীয় ছিল ও লকডাউনে নিয়মতিভাবে বাড়িতে পুজো পাট চলত।
ঘটনায় জানা যায়, মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। এই কুসংস্কারের বশবর্তী হয়েই দুই যুবতী মেয়েকে খুন করলেন উচ্চশিক্ষিত এ দম্পতি। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে, মেঝেতে পড়ে রয়েছে দুই নিথর দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। অথচ হেলদোল নেই বাবা-মায়ের। বরং তাঁরা পুলিশকে বাধা দিয়ে বলতে থাকেন, ‘আপনারা চলে যান। রাতটুকু আমাদের সময় দিন। ওদের বাঁচিয়ে তুলব আমরাই।’ পুলিশ তাদের কথায় সাড়া না দিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বাবা-মাকে।
অভিযোগ, মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার ‘সঞ্জীবনী মন্ত্র’ কতটা রপ্ত করতে পেরেছেন তারা, সেই পরীক্ষা করতেই পিছন থেকে ডাম্বেল দিয়ে দুই মেয়ের মাথায় সজোরে আঘাত করেন ভাল্লেরু পুরুষোত্তম নাইডু ও পদ্মজাদেবী।