অর্থনীতি ডেস্ক:
কভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা সামলে গতিশীল হতে শুরু করেছে অর্থনীতি। যা মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ দুই অর্থনীতি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পালে হাওয়া এনেছে। গত মাসে দেশ দুটির জ্বালানিবহির্ভূত বেসরকারি খাতে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন কার্যাদেশ আসা এই উত্তরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উত্তরণ অথবা সংকোচন নির্দেশ করে। কোনো খাতে এ সূচকের মান ৫০ পয়েন্টের ওপরে থাকার অর্থ হলো সেই খাতটি সম্প্রসারণের পথে রয়েছে।
জানুয়ারিতে আইএইচএস সৌদি অ্যারাবিয়া পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্সের মান দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ১ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরে এর মান ছিল ৫৭ পয়েন্ট। ২০১৯ সালের নভেম্বরের পর সৌদি আরবে জ্বালানিবহির্ভূত বেসরকারি খাতে পিএমআইয়ের মান এটাই সর্বোচ্চ।
জানুয়ারিতে সৌদি আরবের শিল্পোৎপাদনে গত ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ১১ বছর ধরে দেশটির শিল্পোৎপাদনের পরিসংখ্যান রাখছে আইএইচএস মার্কিট। এ সময়ে আলোচ্য খাতে সৌদি আরবের যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, জানুয়ারিতে শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার তার সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ কভিড-১৯-এর কারণে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, তা কাটিয়ে আবার আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে দেশটির শিল্প খাত।
বেসরকারি খাতের কার্যক্রমে এ উত্থানের প্রভাব পড়েছে সৌদি আরবের শ্রমবাজারেও। এক বছরের বেশি সময় পর গত মাসে দেশটিতে কর্মসংস্থানের হার ধনাত্মক পর্যায়ে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে দেশটির বেসরকারি কোম্পানিগুলো এখন ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে আস্থা ফিরে পেতে শুরু করেছে এবং তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
আইএইচএস মার্কিটের উপাত্ত বলছে, জানুয়ারিতে সৌদি আরবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণে নতুন কার্যাদেশ পেয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার আগের মাসের রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে কিছুটা কমেছে। কার্যাদেশের পাশাপাশি গত মাসে সৌদি আরবে বাজার পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়েছে এবং অনলাইনে বিক্রি ও রফতানি চাহিদা বেড়েছে।
আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ইউএইতেও গত মাসে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে জোয়ার দেখা গেছে। জানুয়ারিতে দেশটির জন্য আইএইচএস মার্কিট পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্সের মান দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ২, যা আগের মাসেও একই ছিল। ২০১৯ সালের আগস্টের পর ইউএইর উৎপাদন খাতে পিএমআইয়ের মান এটাই সর্বোচ্চ।
জানুয়ারিতে দেশটিতে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি বেড়েছে। নির্মাণ প্রকল্পগুলোয়ও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এ সময়ে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধির হার ডিসেম্বরের চেয়ে কিছুটা কমলেও তা কভিড-১৯ মহামারী সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
সৌদি আরবের মতো ইউএইর শ্রমবাজারেও উত্থান হয়েছে গত মাসে। জানুয়ারিতে দেশটিতে কর্মসংস্থানের হার এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইতিবাচক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারিসংক্রান্ত বিধিনিষেধ পর্যায়ক্রমে শিথিলের মাধ্যমে সৌদি আরব ও ইউএই উভয়েই তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করেছে। ফলে দেশ দুটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আবার আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।