বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক শোক বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অমর এ অভিনেতার চিরবিদায়ে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের রুহের শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
শতাধিক চলচ্চিত্রে বহু খল ও কমেডি চরিত্রকে অমর করে যাওয়া এ বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম।
এর আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গেল বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুণী এ অভিনেতাকে।
এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য কয়েকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক।
এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন পুরান ঢাকার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী লোকনাথ হাইস্কুলে। তার বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। মা নুরুন্নেসা বেগম। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের পথচলা শুরু। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ সিনেমার জন্য। ওই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।
শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করলেও অভিনেতা হিসেবে রুপালি পর্দায় আসেন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রবীণ এ অভিনেতা এখনও বাংলা সিনেমার দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও নন্দিত।