স্বামী-স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক। স্ত্রী ডা. শারমিন আক্তার অন্তরার স্বপ্ন ছিলো বিসিএস পাস করে মানুষের সেবায় কাজ করবেন। আর সেই স্বপ্নপূরণ করতেই বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা দিতে সিলেট থেকে বাসে চড়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন এই চিকিৎসক দম্পতি। কিন্তু স্বপ্ন তাদের পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। একটি মাত্র দুর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলো। জীবনে নেমে এলো শোক আর দুঃখের ঘোর অমানিশা। যেন সব শেষ হয়ে গেলো।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশীদপুর এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হন আরও অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী।
নিহতদেরই একজন ডা. অন্তরার স্বামী ডা. ইমরান খান। গুরুতর আহত অবস্থায় ডা. অন্তরা নিজেও এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
ডা. ইমরান সিলেটে উইমেন্স মেডিকেল কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ছিলেন। আর তার স্ত্রী ডা শারমিন আক্তার অন্তরা একই কলেজে ইন্টার্নি করছিলেন। স্ত্রী এবারের ৪২তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষার্থী। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিলো অন্তরার। সেজন্য দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে স্বামীকে নিয়ে এনা পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৭৩১১) ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন অন্তরা।
বাসটি ঢাকা মহাসড়কের রশিদপুরে নামক স্থানে যাওয়া মাত্রই বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অন্তরার স্বামী ইমরান খান। আর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ডা. অন্তরা।
এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর ও অন্যজনের বয়স সাড়ে চার বছর। তারা নগরীর ফাজিল চিশত এলাকায় থাকেন।
এদিকে ডা. ইমরানের এমন মৃত্যুতে তার এলাকার লোকজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তার সহকর্মীরা। কোনোভাবেই এই অকাল মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মী, পরিবার ও স্বজনরা।
ডা. ইমরানের বোন ডা ইন্নরী খান বলেন, ‘আমার ভাই তার স্ত্রীর নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা যাচ্ছিলেন। সকালে এনা পরিবহনের একটি বাসে রওয়ানা দেন তারা। যাওয়ার সময় তার বাচ্চা দুটোকে আমাদের কাছে রেখে যান। সকাল সাড়ে ৭টায় খবর পেলাম তারা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন।’
মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হন ৪ জন, ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৪ জন মারা যান। দুর্ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।