নরসিংদীতে ছগির মিয়া (২৬) নামের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সময় এক নারীসহ ২ ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। পরে তাদের দুজনকে আহত অবস্থায় নরসিংদী মডেল থানার টহলরত পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় লোকজন। বুধবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার শীলমান্দী ইউনিয়নের মদনগঞ্জ সড়কের ৫ নাম্বার ব্রিজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় গত রাতে দুইজনের নাম উল্লেখসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেছেন আহত অটোরিকশাচালক ছগির মিয়ার ছোটভাই মোহাম্মদ আলী। ছগির মিয়া নরসিংদীর মাধবদীর খিলগাঁও এলাকার মোহাম্মদ জাকারিয়ার ছেলে।
গণপিটুনির পর গ্রেপ্তার দুজন হলেন, নরসিংদীর মাধবদীর বালুসাইর এলাকার সাইফুল ইসলামের মেয়ে হামিদা আক্তার (২২) ও আলগী এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে মো. আলআমিন (২২)। মামলা হওয়ার পরই আটক এই দুজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সোয়া ৮টার দিকে মাধবদী ফায়ার সার্ভিসের সামনে থেকে অসুস্থ এক রোগীকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে ছগির মিয়ার অটোরিকশায় উঠেন এক নারীসহ পাঁচজন। নরসিংদী-মদনগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটির ৫ নাম্বার ব্রিজ এলাকার একটি নির্জন স্থানে আসার পর অটোরিকশাটিকে থামাতে বলা হয়। এ সময় অটোরিকশাটি থামালে চালক ছগির মিয়ার বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। ওই সময় পেছন থেকে আসা দুইটি মোটরসাইকেলের কয়েকজন আরোহী ছগিরকে উদ্ধার করে অটোরিকশাটির পেছনে ধাওয়া করে নরসিংদী নতুন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় তাদের ধরে ফেলেন। তাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ঘটনা শুনে তাদের দুজনকে গণপিটুনি দেন। এর মধ্যেই তিনজন ছিনতাইকারী পালিয়ে যান। পরে তাদের দুজনকে ওই সড়কে টহলরত পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় জনতা।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ছগির মিয়াকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার সাহা জানান, ছগির মিয়ার বাম হাতের ওপরের অংশে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
আহত অটোরিকশার চালক ছগির মিয়ার ছোটভাই ও মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী জানান, আমার ভাই সবসময় মাধবদী এলাকাতেই অটোরিকশা চালাতেন। অসুস্থ রোগীর কথা শুনেই নরসিংদীতে আসতে রাজী হয়েছিলেন তিনি। তার বাম হাতের ওপরের অংশে ছিনতাইকারীর চাপাতির কোপের আঘাত লেগেছে । এতে তার হাতের রগ-মাংস কেটে গিয়ে হাড়ে আঘাত লাগে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান জানান, যাত্রীবেশে অটোরিকশা ছিনতাই করতে এসেছিলেন পাঁচজন। তাদের দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে আমাদের হাতে দিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের কাছ থেকে রক্তমাখা একটি চাপাতি জব্দ করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া অন্য তিন আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।