মোদিবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের বাধা পেয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ানো এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলা চালিয়েছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা, আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িতে। দিনভর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত চারজনের মরদেহ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত অন্তত ২০ জনের মধ্যে আরও সাত জন চমেক ও বাকিরা হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। থেমে থেমে সংঘর্ষ এখনো চলছে। পুরো হাটহাজারীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের জেরে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন জানান, আহতদের মধ্যে ১১ জনকে চমেক হাসপাতালে আনার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চার জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে তিন জন মাদ্রাসাছাত্র হলেন, মেরাজুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় বাসিন্দা অন্যজনের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। হেফাজতকর্মীরা তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে মারধর করায় গুরুতর আহত হয়েছেন তারা। তাদেরকেও চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এএসআই আলাউদ্দিন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সারাক্ষণের হাটহাজারী সংবাদদাতা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় শুক্রবার (২৬ মার্চ) জুম্মার নামাজের পর হেফাজতকর্মীদের মিছিল হাটহাজারী থানার দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা প্রথম দফার সংঘর্ষে হাটহাজারী মাদ্রাসার সাত জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একপর্যায়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে থানায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং রাস্তায় অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করেন হেফাজতকর্মীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন এবং তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে মারধর করেন তারা। পরে পুলিশ সদস্যদের ছেড়ে দিলে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সার্কেল এএসপিসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বার বার ফোন করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা প্রথমে টিয়ারশেল ছুড়ে হেফাজতকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হন।
হেফাজতের কর্মীদের দেয়া আগুনে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। হেফাজতকর্মীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ থানার সামনে অবস্থান করছে।
এদিকে চমেক হাসপাতালে হেফাজতের কর্মীদের চিকিৎসা দেয়ায় হাসপাতালটিতে ভাংচুর করেছেন ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
আহত ও নিহতদের দেখতে বিকেলে চমেক হাসপাতালে আসেন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এ সময় হেফাজতের কর্মীরা ‘মোদি গো ব্যাক’ স্লোগান দেন।