বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে সারাহ বেগম কবরী। শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেয়া হয় এই অভিনয়শিল্পীকে। এরপর বাদ জোহর কবরস্থান এলাকায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, পরিচালক নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, প্রযোজক ইকবালসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের সহযোদ্ধা ও আত্মীয়-পরিজনদের অনেকেই।
এদিন সকালে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের হিমঘর থেকে কবরীর মরদেহ নেয়া হয় মোহাম্মদপুর আল মারকাজুলে। সেখানে গোসল শেষে তার মরদেহ গুলশান-২ নম্বর এলাকার লেক রোডের বাড়িতে শেষবারের মতো নেয়া হয়। বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখার পর কবরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে।
কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নবীন-প্রবীণ সব শিল্পীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রকাশ করছেন।
গত ৫ এপ্রিল কবরীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর ওইদিন রাতেই তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
সেখানে ৮ এপ্রিল দুপুরে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ১৫ এপ্রিল নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেন কবরী। পারিবারিক নাম মিনা পাল। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে। এরপর ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মিনা পাল থেকে কবরী হয়ে উঠেন তিনি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কবরী।
অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে চলচ্চিত্রের পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাণে অভিষেক হয় কবরীর। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন তিনি। সিনেমাটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেলেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী। নিয়মিত লেখালেখিও করতেন। ২০১৭ সালে তার লেখা স্মৃতিচারণমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশিত হয়।