স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতের আন্দোলনসহ নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন মাওলানা মামুনুল হক। নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যুর হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। মামুনুলকে এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মনে করছে পুলিশ।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত তাকে মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের হামলা-ভাঙচুরের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, আরও কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে।
অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম খোলা কাগজকে বলেন, তেজগাঁও বিভাগের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে নজরদারি করে মামুনুলকে গ্রেফতার করে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ও অন্যান্য মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে কোন কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মামুনুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সহিংস কর্মকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুল হক। ওই ঘটনার দীর্ঘ তদন্তে মামুনুলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়া নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মামুনুল হকের নাম এসেছে ঘুরে ফিরে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল পল্টন থানায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আরও ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
বায়তুল মোকাররম-চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনার রেশ না কাটতেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। গত ৩ এপ্রিল মামুনুল হকের অবরুদ্ধের ঘটনায় তার সমর্থকরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
রিসোর্টে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সোনারগাঁ থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় মামুনুল হককে প্রধান আসামিসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
১০ এপ্রিল মামুনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মায়ের সন্ধান ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পল্টন থানায় একটি জিডি করেন। এর পরদিন নিজের বোনকে মামুনুল হকের স্ত্রী দাবি করে তার সন্ধান চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেন মো. শাহজাহান নামে আরেকজন। তখন থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে লিপি নামে মামুনুলের কথিত তৃতীয় স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়।
এর মধ্যেই একের পর এক মামুনুলের ফোনালাপ ফাঁস হতে থাকে। পবর্তীতে সেসব ফোনালাপের সত্যতা বিষয়ে নিজেই ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেন মামুনুল হক।
মূলত ওই ঘটনার পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল।