দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আরও প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে। তবে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবং প্রত্যেকে সচেতন না হলে সামনে আবার করোনার ‘তৃতীয় ঢেউ’ চলে আসতে পারে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউ আমরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামলে নিয়েছিলাম। বর্তমান সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ সম্পর্কে আমরা সচেতন না হলে সামনে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে। তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ কারণে করোনার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে দেশের প্রতিটি মানুষকে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএসএমএমইউ-এর ২৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দেশের সার্বিক উন্নয়নে স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিইনি, অবহেলা করেছি। যার ফল এখন করোনায় পেয়েছি। করোনা মহামারিতে আমরা কতটা অসহায়, সেটা দেখেছি। শুধু আমরাই নই, পৃথিবীর কোনও দেশই স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়নি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য আমাদের আরও বেশি এগিয়ে আসা দরকার। স্বাস্থ্যসেবার বিপর্যয় ঘটলে মানুষের কী অবস্থা হয়, করোনা সেটাই আমাদের দেখিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার বিপর্যয় ঘটলে দেশের সব উন্নয়ন থেমে যায়, দেশে শান্তি থাকে না, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে আমাদের বাজেট জিডিপির মাত্র ০.৯%। আমরা কাজ করছি জিডিপিতে এটাকে ৯/১০ শতাংশ করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। করোনা মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভালো কাজ করছে। তারা আলাদা করে বড় একটি করোনা ইউনিট স্থাপন করেছে। এখানে টিকা কার্যক্রমও চলছে সফলতার সঙ্গে।’
ভ্যাকসিন আমদানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুরুতে খুব ভালোভাবেই টিকা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাঝপথে ভারত টিকা বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবু বিকল্প হিসেবে আমরা রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দিয়েছি, যেন আমাদের টিকা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি দেশে টিকা বানাতে চায়, সে সুযোগও আমরা দিচ্ছি। আমরা বলেছি, কেউ টিকা বানাতে চাইলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আমাদের দেশে কয়েকটি ফ্যাক্টরি রয়েছে, যেখানে তারা টিকা তৈরি করতে পারে। আমরা চাই তারা টিকা বানিয়ে আমাদের দেশের মানুষকেও দিক এবং দেশের বাইরেও রফতানি করুক।’
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম. ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ প্রমুখ।