ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিন চলছে ধ্বংসযজ্ঞ, ঘটছে প্রাণহানি, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বিমান হামলায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনিরা বাসস্থান হারাচ্ছে, কেউ না কেউ হারাচ্ছে তার স্বজনকে। একটা লাশ দাফন শেষ হতে না হতেই আরও একটা লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে তাদের।
গত ১০ মে থেকে দখলদার ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় ৩৬৬ শিশুসহ এক হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা ১৯২। তাদের মধ্যে ৫৮ জন শিশু। প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে মাটি।
ফিলিস্তিনে দায়িত্ব পালন করা এক সাহায্যকর্মী বলেন, শনিবার শাতি শরনার্থী শিবিরে এক হামলায় এক পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়। তাদের মধ্যে ১০ জন শিশু।’
ইসরায়েলের এ হামলায় এক পিতা তার চার সন্তান হারিয়েছে। সন্তান হারা শোক বুকে চাপা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তারা তো কোনো অস্ত্র বহন করছিল না। তারা রকেটও ছুঁড়ছিল না।’
এমন ঘটনায় খুব স্বাভাবিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাসন লি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ নেয়ার আগে আর কতগুলো পরিবারকে প্রিয়জন হারাতে হবে? বাড়ির ওপর বোমাবৃষ্টি শুরু হলে শিশুরা কোথায় যাবে?
আবাসিক এলাকার হামলার আশঙ্কায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। ফলে একদিকে তারা যেমন অনিশ্চিত জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে তেমনি মানবিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ঘর বাড়ি ছেড়েছে।
বিশ্বের অন্য সব এলাকায় যেখানে সংঘাত চলছে সে সব এলাকায় থেকে গাজা পরিস্থিতি ভিন্ন। কেননা গাজা থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ। ইসরায়েল যদি যাতায়াতের অনুমতি না দেয় তাহলে তারা গাজা ছেড়ে বের হতে পারবে না। ফলে জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত ১৬টি স্কুলে তারা আশ্রয় নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এ সব স্কুলকে আশ্রয় শিবিরে রূপ দিতে হয়েছে। গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ এর পরিচালক ম্যাথিয়াস বলেন, আমাদের প্রধান কাজ ছিল তাদের আশ্রয় দেয়া। এখন আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেব।’
ইসরায়েলের হামলার কারণে সাহায্য সংস্থাগুলোর কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষই সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর তথ্যানুসারে ২০১৯ সালে গাজার ১৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৫ ভাগই সাহায্য সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া মৌলিক ওষুধের এক তৃতীয়াংশ সেখানে পাওয়া যায় না।
তেলের অভাব বিদ্যুৎ ও পানির অবস্থা নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১০ মে থাকায় সীমান্ত বন্ধ থাকায় গাজায় কোনো তেল পৌঁছাতে পারেনি। এরই মধ্যে ডিজেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স ও বিদ্যুত ব্যবস্থা সচল রাখতে সেখানে জরুরিভিত্তিতে তেলের প্রয়োজন।
ইউএনআরডব্লিউএ এর পরিচালক ম্যাথিয়াস বলেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা মানুষগুলো এখানে থাকতে শুরু করলে দ্রুত পানির অভাব দেখা দেবে। আশ্রয় শিবিরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
খুব বেশি ফিলিস্তিনি করোনার টিকার দেখা পায়নি। ইসরায়েলে অন্তত ৬২ ভাগ লোক অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে, সেখানে মাত্র পাঁচ ভাগ ফিলিস্তিনি টিকা পেয়েছে। গাজায় প্রতিদিন অন্তত এক হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর আগেই সেখানকার হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ ছিল। এখন স্বাভাবিকভাবে অবস্থা আরও নাজুক হয়ে উঠবে। ম্যাথিয়াস বলেন, যদি ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত থাকে তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালগুলো তাদের সেবা দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে। তখনই চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।