মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে আরবিতে ‘হাসাদ’ অর্থাৎ হিংসা বলা হয়। ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) হিংসাকে ঘৃণা করতেন। হিংসার বিরোধিতা করতেন। সাহাবিদের হিংসা-বিদ্বেষ পরিহারের আদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠ বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৩)
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না। পরস্পর শত্রুতা করবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না।’ তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪২৪)
জান্নাতের অধিবাসী হিংসা করে না জান্নাতি জগতের শ্রেষ্ঠ সফল ব্যক্তি। যে জান্নাত লাভ করেছে সে ধন্য। যে জান্নাতি হবে, তার জীবনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। হিংসা-বিদ্বেষের ঘৃণিত প্রথা জান্নাতি লোকের চরিত্রের সঙ্গে যায় না। জান্নাতি লোকমাত্রই এসব নোংরা স্বভাব থেকে পবিত্র থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে প্রবেশ করবে আর তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তারা অতি উজ্জ্বল তারার মতো আকৃতি ধারণ করবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যক্তির অন্তরের মতো থাকবে। তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভেদ থাকবে না আর পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের দুজন করে স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলাম মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করবে। তারা রোগাক্রান্ত হবে না, নাক ঝাড়বে না, থুথু ফেলবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের আর চিরুনিসমূহ হবে স্বর্ণের। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাঠ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৪৬)
দুটি বিষয়ে হিংসা করা যাবে রাসূল (সা.) বলেন, ‘দুটি বিষয় ছাড়া হিংসা করা যাবে না। এক. যাকে আল্লাহ কোরআন দান করেছেন সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। একজন বলল, এই ব্যক্তিকে যা দেয়া হয়েছে, যদি আমাকেও তা দেয়া হতো, তবে সে যেমন করছে, আমিও তা করতাম। দুই. যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, সে তা যথোচিতভাবে খরচ করে। একজন বলল, তাকে যা দেয়া হয়েছে, তা যদি আমাকে দেয়া হতো, তাহলে আমি অবশ্যই তা-ই করতাম, সে যা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৩২)
পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে বিশ্বের সব সৃষ্টির সেবা ও জনকল্যাণ কামনাই হলো সত্যিকারভাবে ইসলামের অনুশীলন। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী লোকেরা শরিয়তের পরিপন্থী কাজ করে দ্বীন ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করে। বাহুবলে হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা ও শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক জীবনে শান্তি ফিরে আসে না। তাই কোনো কিছু নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ করা উচিত নয়। নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। সুতরাং আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হলে ধর্মপ্রাণ মানুষকে অবশ্যই সর্বাবস্থায় হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দর মনমানসিকতায় সৎভাবে পরিশীলিত জীবনযাপন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।