করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী সাত দিনের জন্য জেলাগুলোতে লকডাউন থাকবে। জেলাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী।
গতকাল সোমবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জরুরি বৈঠকে এ ঘোষণা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এসব জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।
এই সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না। এসব জেলায় সরকারি অফিসগুলো কীভাবে চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ থাকবে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর বাইরে যদি কোনো জেলা লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে জেলা প্রশাসন থেকে লকডাউন দিতে পারবে।
বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মোংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, বেনাপোল, শার্শা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা, পুরো মাগুরা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া এবং বগুড়া পৌরসভায় একই ধরনের বিধিনিষেধ চলছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ঢাকার বিষয়ে নতুন কোনো বিধিনিষেধ আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রেল, আকাশ ও নৌপথের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ না থাকায় ও এসব যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকায় আসা যাবে। তবে যে জেলাগুলোতে লকডাউন করা করেছে সেখানে থাকবে না রেল ও লঞ্চ। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, যেমন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে যেসব ট্রেন চলে সেগুলো বন্ধ থাকবে। কিন্তু দূরের যাত্রার ট্রেনগুলো যথারীতি চলবে। তবে যেসব জেলায় বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেখানে ট্রেন থামবে না।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারাম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, সাত জেলায় বিধিনিষেধের মধ্যে এই সাত জেলায় যাত্রীবাহী নৌযান চলবে না।
এদিকে করোনাভাইরাসে সবশেষ গতকাল দেশে একদিনে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৬৩৬ জন। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। এরপর মে মাসে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে বেশি কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। তবে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে জুনের শুরুতে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে থাকে। তখন সংক্রমণের হার অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
আর সারা দেশে চলমান সাধারণ বিধিনিষেধের মেয়াদ গত ১৬ জুন এক ধাক্কায় এক মাস বাড়িয়ে দেয় সরকার। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয় তখন। ১৬ জুনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, উচ্চঝুঁকির জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে লকডাউনসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।