1. khandakarshahin@gmail.com : Breaking News : Breaking News
  2. laxman87barman@gmail.com : laxman barman : laxman barman
  3. shahinit.mail@gmail.com : narsingdi : নরসিংদী প্রতিদিন
  4. msprovat@gmail.com : ms provat : ms provat
  5. hsabbirhossain542@gmail.com : সাব্বির হোসেন : সাব্বির হোসেন
  6. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
  7. wpapitest@config.com : wpapitest :
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপণ দিতে ০১৭১৮৯০২০১০

মঞ্চের রাজা-রানীদের দুর্দিন

ডেস্ক রিপোর্ট | নরসিংদী প্রতিদিন
  • প্রকাশের তারিখ | বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১
  • ২৩৫ পাঠক

প্যান্ডেলের চারদিকে ভরা দর্শক অপেক্ষায়। কোন সময় শুরু হবে যাত্রাপালা। অবশেষে এক সময় সানাই বেজে ওঠে। দর্শকরা এক পর্যায়ে চুপ। লাইটের কম্পন আর ড্রামের তালে মঞ্চে প্রবেশ করলেন একাব্বর বাদশা আর তার উজির

বাদশা বলেন, ‘শোনো উজির, আমি শুনলাম প্রজারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কী ষড়যন্ত্র করছে এবং কেন করছে বলতে পারো?’ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে উজির আমতা-আমতা করেন। তখন বাদশা অভয় দিলে উজির বলেন, ‘কী বলব জাঁহাপনা, আপনার ছেলে-মেয়ে নাই। খোদা আপনাকে আটকুঁড়ে করে রেখেছেন। প্রজারা বলছে, আপনার মুখদর্শনে অন্ন জোটে না, তাই সবাই এ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ভাবছে।’

টানটান উত্তেজনা আর দর্শকের উৎকণ্ঠাকে পুঁজি করে এভাবেই এগিয়ে চলছে যাত্রা পালার গল্প। সারা রাত জেগে দর্শকরা উপভোগ করছিলেন এ যাত্রাপালা।

একটা সময় ছিল, যাত্রাপালা দেখতে ছোট বড় সব বয়সীরা দল বেঁধে ছুটে যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির হাজার বছর ধরে মিশে থাকা বিনোদনের অন্যতম নিদর্শন এ যাত্রাপালা গান আর চোখে পড়ে না। এতে করে অস্তিত্ব সংকটে আছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা।

একদিকে যেমন হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালা অন্যদিকে যাত্রাপালার শিল্পীরা হয়ে পড়েছেন বেকার। ফলে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে যাত্রাপালার অভিনয় জগত থেকে সরে যাচ্ছেন শিল্পীরা।

যাত্রাশিল্পীরা জানান, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর বিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যে লালিত জেলা নরসিংদী। এ জেলার এক সময়কার ঐতিহ্য যাত্রাপালার দলগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ কাপাত। আর এ যাত্রাপালার সঙ্গে শখবশত জড়িত ছিল সামাজের শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। আশির দশকের পর এ জেলায় বনফুল অপেরা, কাজল অপেরা, শান্তি অপেরা, সুমি অপেরা, মেঘনা অপেরা, ভাগ্যলিপি অপেরা, শিল্পী অপেরা, পূর্ণিমা অপেরা ও কর্ণফুল যাত্রা ইউনিটসহ প্রায় ২০টিরও বেশি যাত্রাদল ছিল।

এ সব যাত্রাদলের মালিক ছিল এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর এ সব যাত্রা দলকে কেন্দ্র করে সত্তর দশকে নাট্যকার জালাল উদ্দিন নরসিংদী শাহের বাজি মোড় প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন মঞ্চরূপা সাজঘর। আশির দশকে গড়ে তোলেন যদুলাল সাহা পদ্মা সাজ বিতান, দুলাল মিয়ার মঞ্চ বিতান, চান মিয়ার মঞ্চ শ্রী সাজ বিতান, সমীর চন্দ্র সাহার পোশাক বিতান, ভেলানগরের কাজী মোগল হোসেনের শিল্পী সাজ বিতান ও ধনু মিয়ার রংধনু সাজ বিতানসহ কয়েকটি সাজঘর। নব্বই দশকে ভোলানগরে প্রতিষ্ঠিত হয় নূরুল ইসলামের স্বদেশের লোকনাথ সাজঘর, শাহীনুর আক্তারের ভাই ভাই সাজ বিতান, জীবন দাসের মঞ্চশোভা সাজ বিতান, কবির হোসেনের কাকলী সাজ বিতান, শহীদুল্লা বাহার ও আজাদের নিউ শিল্পী সাজ বিতান।

বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব প্রায় নেই। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ধর্মীয় গোঁড়ামি, ডিশ অ্যানটেনার ছড়াছড়ি, জুয়া-হাউজি ও অশ্লীলতার কাছে নুয়ে পড়েছে বাঙালি জাতির লোকজ এই সংস্কৃতি।

মঞ্চ থেকে হারিয়ে গেছে রহিম বাদশা-রূপবান কন্যা, কমলা রানীর বনবাস, গুনাই বিবি, আপন-দুলাল, সাগর-বাদশা, লাইলী-মজনু, কাজল-রেখা, প্রেমের সমাধি তীরে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মা হলো বন্দি, জেল থেকে বলছি, জীবন নদীর তীরে এবং আরও অনেক পালা। কিন্তু আধুনিকতায় ছোঁয়ায় ঐহিত্যবাহী এ শিল্পটি আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। এসব যাত্রাপালা গ্রামগঞ্জে নববর্ষসহ বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজন করে মঞ্চায়িত হতো।

মহামারী করোনায় এ যাত্রাপালা একেবারেই ধসে পড়েছে। তাই ভালো নেই যাত্রাপালা মঞ্চের রাজা-রাণী ও সেনাপতিরা। যার ফলে এ পেশায় নিয়োজিত শিল্পী-কলাকুশলীরা অনেকেই বেকার অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

এছাড়া তাদের মধ্যে এখন কেউ কেউ অটোরিকশা চালাচ্ছেন, কেউ কাঁচামালের ব্যবসা করছেন, কেউ রাস্তার ফুটপাতে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন। কাউকে মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

যাত্রাশিল্পীরা আরও জানান, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল যাত্রাশিল্পীদের জন্য সুদিন। তারপর থেকে আস্তে আস্তে এ শিল্পের প্রতি বাধা নিষেধ আসতে থাকে। এ শিল্পের দুর্দিন হলেও নিবন্ধনের জন্য প্রত্যেক দলের কাছ থেকে শিল্পকলা একাডেমি নিচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা করে। কিন্তু তারা যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে বিশেষ কিছুই করে না। এ যাত্রাশিল্পের সঙ্গে বহু লোকের জীবিকাও জড়িত। প্রতিটি দলে শিল্পী, কলাকুশলী মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ জন লোক থাকে। এ হিসাবে ২০টি যাত্রা দল অন্তত ১ থেকে দেড় হাজার লোকের জীবিকার সংস্থান। পালা মঞ্চস্থ না হওয়ায় এসব মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। অনেক দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক বাদক, পালাকার চলে গেছেন দল ছেড়ে।

নরসিংদীর যাত্রা মঞ্চ কাঁপানো ভিলেন অভিনেতা ফরিদ আহম্মেদ বলেন, যাত্রাপালা বিলুপ্তির পথে। তাই বেকার হয়ে গেছি। কোনো উপায় না দেখে মাছ বিক্রি করছি। একটা কিছু করে তো জীবিকা নির্বাহ করতে হবে।

নব্বই দশকের দিকে নরসিংদীসহ সারা দেশে মঞ্চ কাঁপানো গীতি নাট্যের অভিনেতা আলী আহম্মেদ জীবিকার তাগিদে এখন ভোলানগর বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাতে বসে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমরা এখন বেকার। আমাদের খবর এখন আর কেউ নেয় না। একসময় মঞ্চের রাজা-বাদশারা আজ জীবিকার তাগিদে পথে বসে পান-সিগারেট দোকানদার।

যাত্রা দলের যন্ত্রকারিগর রুবেল মিয়া বিষু বলেন, আমি যাত্রাদলের একজন ড্রাম বাদক ছিলাম। সারা দেশে আমার মতো অনেকেই আছেন, যারা অন্য কোনো কাজ শেখেননি। এখন যাত্রাপালা মঞ্চায়িত না হওয়ার ফলে আমাদের সময়টা খুব দুর্দিন কাটছে।

যাত্রাশিল্পী পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লোকনাথ সাজ বিতানের মালিক নূরুল ইসলাম স্বদেশ বলেন, আমি এই জগতে ১৯৮৫ সাল থেকে জড়িত। এ সময় গ্রামগঞ্জে প্রচুর যাত্রা হতো। যাত্রাকে কেন্দ্র করেই সাজ বিতান নামে ব্যবসা শুরু করি। এখন সব বিলুপ্তের পথে। আমাদের বেঁচে থাকাটাই কষ্ট হয়ে গেছে। এই বিলুপ্তের সময়ও নরসিংদীতে প্রায় তিন শতাধিক শিল্পী আছেন, যারা শুধু এই শিল্পের ওপরই নির্ভরশীল।

যাত্রাশিল্পীর মেকাপম্যান উজ্জল মিয়া বলেন, আমি যাত্রাপালা শিল্পীদের মেকাপম্যান হিসেবে কাজ করতাম। প্রতি রাতে আমার ইনকাম ছিল এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। এ কাজ করতে করতে এ শিল্পের প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়। এখন আর যাত্রাপালা মঞ্চায়িত হয় না। তাই সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়ছি।

নরসিংদী জেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক টি এইচ আজাদ কালাম জানান, আমি ১৯৭৮ সাল থেকে যাত্রা পরিবেশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতি রাতেই আমরা যাত্রাপালা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চায়িত করতাম। এখন আর কেউ যাত্রাপালা মঞ্চায়িত করার জন্য ডাকে না। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত আছে এখন তারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খবর আর কেউ রাখে না। যারা এই পেশা ছাড়া অন্য কাজ জানেন না, তাদের এখন বড়ই দুর্দিন চলছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন এখন যাত্রার নামই শুনতে চায় না। আমরা যাত্রার মঞ্চায়নের অনুমতিই পাই না। সরকার যদি সহজে পারমিশন দেয় তাহলে এখনো ভালো চলবে যাত্রাশিল্প। তাছাড়াও সরকারি উদ্যোগে যদি প্রতিটি জেলায় শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে যাত্রার মঞ্চায়ন করার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে আবার এই শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

যাত্রাশিল্প বিলুপ্তির পেছনে অশ্লীলতা প্রধান কারণ এ প্রশ্নে কালাম বলেন, যারা পেশাদার যাত্রাশিল্পী, তারা কখনো এসব অশ্লীলতা বা উলঙ্গ নৃত্যের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং আয়োজকরাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে হাউজি খেলা ও অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করত। তাছাড়া এক সময় যাত্রাপালা করতেন সাধারণত সমাজের শৌখিন ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা। এখন আর আগের মতো শিক্ষিত যুব সমাজ এ যাত্রাপালা করতে এগিয়ে আসছেন না। যার ফলে কিছু অশিক্ষিত আনারি লোকজন এ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে।
#
আশিকুর রহমান পিয়াল, নরসিংদী, দৈনিক খোলা কাগজ



সংবাদটি শেয়ার করিুন

এই পাতার আরও সংবাদ:-



বিজ্ঞাপণ দিতে ০১৭১৮৯০২০১০



DMCA.com Protection Status
টিম-নরসিংদী প্রতিদিন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শাহিন আইটি এর একটি প্রতিষ্ঠান-নরসিংদী প্রতিদিন-
Theme Customized BY WooHostBD