মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে হয়েছে বিশ্বমানের ফুল বাগান
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে হয়েছে বিশ্বমানের ফুল বাগান
বেকার না থেকে পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস বা কর্পোরেট চাকরি-সাধারণত এমনটাই স্বপ্ন থাকে সবার। কিন্তু কেউ কেউ এই সাধারণের বাইরে গিয়েও হয়ে ওঠে অসাধারণ। তেমনই একজন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা তানভীর আহমেদ।
ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শেষ করার পর চাকরির পিছনে না ছুটে নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিশ্বমানের ফুল ও ফলের বাগান। তার বাগানে রয়েছে ভারত, থাইল্যান্ড, চায়না, আমেরিকা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের ৭ শতাধিক পদ্ম, জলজ ফুল ও ফল গাছের সমারোহ।
প্রথমে ২০১৪ সালে মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে গাছ কিনে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বারান্দায় গাছ রেখে পরীক্ষামূলক শুরু করেন পরে তার গ্রামের বাড়ির পাশেই ২৪ শতাংশ জমিতে শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তার বাগানে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি ফুল এবং ফলের গাছ রয়েছে। তার বাগানে রয়েছে এঞ্জেল ট্রাম্পেট, ক্যানাঙ্গা, গ্লিরিসিডিয়া, কানাইডিংগা, ডম্বিয়া, বিভিন্ন রঙের দোলন চাঁপা, আফ্রিকান বাওবাব, হলুদ শিমুল, হাজার পাপড়ির পদ্ম (ঞযড়ঁংধহফং চবঃধষং) স্থল পদ্ম, জল গোলাপ, নীলমনি, শ্বেতমনি, সরস্বতী চাঁপা, গোলাপি সহস্র বেলি, রাজ অশোক, পার্সিয়ান জুুঁইসহ ৫০০ প্রজাতির দুর্লভ গাছ।
তানভীরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বাগান করা। থাইল্যান্ড এবং আমেরিকার কয়েকজন বন্ধু তাকে এ ব্যাপারে নানাভাবে সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করেছে। ১০৭ প্রজাতির শাপলা, ৫৬ প্রজাতির পদ্ম, শতাধিক প্রজাতির জবা, ২০ প্রজাতির অন্যান্য জলজ ফুল, ৫০ প্রজাতির লতানো, ৪০ প্রজাতির সুগন্ধি ফুল, ৫০ প্রজাতির ফল গাছ, ২০ প্রজাতির ইন্ডোর প্লান্ট, ২০ প্রজাতির বনজসহ বিদেশি আরও ৫০ প্রজাতির অন্যান্য গাছ এবং দেশি আরও ৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে তার বাগানে। সাম্প্রতিক বন্যায় তার বাগানের দেড় শতাধিক প্রজাতির জবা ফুলগাছ মারা গেছে বলেও জানান তিনি।
তানভীর জানান, তার বাগানে এমন কিছু গাছ রয়েছে যা তার হাত ধরেই বাংলাদেশে এসেছে। কিছু গাছের নামকরণও তার নিজের করা। যেমন-জল গোলাপ। গাছটি জলে হয়। ফুলটা দেখতে সাদা গোলাপের মত। তার দেয়া নাম ‘জলগোলাপ’ নামেই ফুলটি দেশব্যাপী পরিচিত। তার বাগানের মূল আকর্ষণ “হাজার পাপড়ির পদ্ম (ঞযড়ঁংধহফং চবঃধষং)”। যে পদ্ম ফুলটাতে এক হাজার পাপড়ি হয়। তার বাগানে ফোটে ‘‘ব্ল্যাক প্রিন্সেস” নামে গাঢ় খয়েরি শাপলা। সেটাও তার নিজের উদ্ভাবিত শাপলার একটা প্রজাতির। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল ও গাছপ্রেমীরা আসেন তানভিরের বাগান দেখতে। যাওয়ার সময় অনেকে কিনে নিয়ে যান তার পছন্দের গাছটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুরের বিভিন্ন রির্সোটের মালিক তার বাগান থেকে গাছ কেনেন। এছাড়াও, তিনি তার “ইুঁ ুড়ঁৎ ঢ়ষধহঃ ভৎড়স ঁং’’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেও গাছ বিক্রি করে থাকেন।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল গফ্ফার জানান, দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে তানভীরের বাগানে। তিনি নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। তানভীর এবং অন্য কেউ যদি তানভীরের মতো উদ্যোগে আমাদের সহযোগিতা চায়, তবে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে।