শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে প্রাথমিকভাবে যা করবেন
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পৃথিবীজুড়ে মহা আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন বিশ্বজুড়ে। আর এর সংক্রমণও ছড়াচ্ছে ব্যাপক হারে।
কোভিড-১৯ মানুষের শরীরে যেসব ক্ষতি করে তার একটি হচ্ছে অনেকেরই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য বর্তমানে বহু মানুষের ঘরেই রয়েছে অক্সিমিটার।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন নিয়মিত অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন পরিমাপ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
তবে রক্তে অক্সিজেন কমে গেছে কি না, অক্সিমিটার ছাড়াও তা বোঝার উপায় আছে।
যেমন- মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, শরীর দুর্বল লাগতে পারে, শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
রক্তে অক্সিজেন সঠিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে মস্তিষ্কেও অক্সিজেনের ঘাটতি হয়- যা খুবই বিপজ্জনক।
শ্বাস নিতে সমস্যা এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার বিষয়।
একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেনের মাত্রা থাকা উচিত।
অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-এর নিচে নেমে গেলেই সমস্যা শুরু হয়। তখন রোগীকে ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু দরকারের সময় যদি ঘরে অক্সিজেন না থাকে তখন রোগী কিছুটা হলেও শারীরিকভাবে স্বস্তি পেতে পারেন এ রকম কয়েকটি সহজ টিপস দিয়েছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর।
পোশাক ঢিলা করে দেয়া-
আঁটসাঁট পোশাকে এমনিতেই শ্বাস নিতে অনেকের সমস্যা হয়। বুকভরে শ্বাস নেয়া যায় না, কারণ এমন পোশাকে ফুসফুসের পেশি প্রসারিত হতে বাধাগ্রস্ত হয়।
আর যদি এমনিতেই শরীরে অক্সিজেন কম থাকে- তাহলে সাধারণ পোশাকও কষ্ট দিতে পারে।
কোভিড রোগীর শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে শুরুতেই পরনের পোশাক ঢিলা করে দিতে হবে।
টাইট কিছু পরনে থাকলে সেটি খুলতে হবে। অন্তর্বাস, প্যান্ট এ রকম পোশাক অবশ্যই খুলতে হবে। মুখের মাস্কও খুলে দিতে হবে। কেননা মাস্কের কারণেও শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে।
তাড়াহুড়ো করা যাবে না –
রোগী নিজে যদি একা থাকে বা অন্য কেউ যদি তাকে সাহায্য করে তাহলে কারওই তাড়াহুড়া করা যাবে না।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। হাঁটাচলা এমনকি কিছু খেলেও শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।
তাই হাঁটাচলা বন্ধ করে স্থির থাকতে হবে। কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে-
রোগীকে বিছানায় উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে। এতে বুকের ওপর শুয়ে ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করতে পারবে রোগী। কেননা ফুসফুসের একটি বড় অংশ মানুষের শরীরের পিঠের দিকে অবস্থিত। উপুড় হয়ে শোয়ার ফলে ফুসফুসের পিঠের দিকের অংশ সহজে অক্সিজেন পায়। এতে কিছুটা উপকার পেতে পারেন করোনা রোগী।
শ্বাসের ব্যায়াম-
ফুসফুস সুস্থ রাখতে ইদানীং চিকিৎসকেরা সবাইকে ফুসফুসের ব্যায়াম করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
সুস্থ ব্যক্তিদেরও এই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কেননা করোনাভাইরাস ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। কোভিডে আক্রান্ত রোগীরাও শ্বাসকষ্ট হলে শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। জেনে নিন খুব সহজ একটি শ্বাসের ব্যায়াম। রোগীকে লম্বা করে নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে।
সাত থেকে দশ সেকেন্ড অথবা যতক্ষণ সম্ভব ফুসফুসে বাতাস ধরে রাখতে হবে।
তারপর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। এই ব্যায়াম বেশ কয়েকবার করতে হবে।
ভিড় করা যাবে না-
শ্বাসকষ্ট হলে আশপাশ থেকে মানুষজনকে সরিয়ে দিতে হবে। কেননা মানুষের ভিড়ে ঘরে অক্সিজেন কমে গিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে যায়। রোগীকে খোলামেলা জায়গায় রাখতে ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে।
এই টিপসগুলো সাময়িক স্বস্তি দেবে।
তবে এগুলো তাদের জন্যই, যাদের হালকা সমস্যা। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে অক্সিজেন দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সেক্ষেত্রে হাসপাতালে নেয়া বা বাড়িতে সিলিন্ডার এনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারও সহায়তায় রোগীকে অক্সিজেন দেয়াই উত্তম।