কঠোর লকডাউনের পরও নরসিংদীতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিলেও প্রতিদিনই বাড়ছে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা। এতে জেলার একমাত্র কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে বেড়েছে করোনা রোগীর চাপ। ৮০ শয্যার বিপরীতে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক করোনা শনাক্ত ও সন্দেহজনক রোগী। শয্যা না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে এসব রোগীদের। এই প্রথম হাসপাতালটিতে এত সংখ্যক রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৫০৯৫ জন। বর্তমানে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২৮৬ জন। এরমধ্যে জেলার একমাত্র কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৭১ জন। একই হাসপাতালে করোনা সন্দেহজনক বা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৯ জন। এছাড়া বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১২১৫ জন।
শনিবার সরেজমিন কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হতে আসছেন অনেকে। যদিও এই হাসপাতালটিতে মুমূর্ষ রোগীদের জন্য অতিব জরুরি ৫টি হাইফোনজেল ক্যানোলা থাকলেও কার্যকর রয়েছে মাত্র দুটি। তবে এতে অক্সিজেন ব্যবহার বেশি হওয়ায় সংকট কমাতে এই দুটিও আপাতত ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র স্থানীয় শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লার দেয়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেমে একসঙ্গে মাত্র ৫০ জন রোগীর সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া এই জেলায় সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নেই কোন আইসিউ’র ব্যবস্থাও। করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশেষ করে অক্সিজেন এর অভাব থাকায় সংকটের মুখে পড়ছেন অনেক করোনা রোগী। আশংকাজনক হারে করোনা রোগী বাড়ার কারণে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে জেলার সবকয়টি উপজেলা হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ৫টি করে পৃথক শয্যা রাখা হলেও সেসব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর তেমন চিকিৎসা সুবিধা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জেলা পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হয়ে অনেকে ঢাকায় গিয়েও পাচ্ছেন না চিকিৎসার সুযোগ।
এদিকে কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালসহ জেলারসব কয়টি নমুনা সংগ্রহের কেন্দ্রে প্রতিদিনই নমুনা প্রদানকারী মানুষের ভীড় বেড়েই চলছে, বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জেলা পর্যায়ে পিসিআর ল্যাব না থাকায় ঢাকার ল্যাবের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে নমুনার ফলাফল পেতে বিলম্ব হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। সর্বশেষ গত ৯ দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫০ জন, মারা গেছেন ৪ জন।
কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. এএনএম মিজানুর রহমান বলেন, যে হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এতে আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে সেবা প্রদান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক, নার্সসহ আরও জনবলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে আশা করি দ্রুতই পেয়ে যাবো। সামর্থ্যরে মধ্যে আমরা সাধ্যমত করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলাম বলেন, করোনায় আক্রান্ত বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দেয়ার জন্য বর্তমানে জেলায় ৮০ শয্যা থেকে এরই মধ্যে ১২০টি শয্যা করা হয়েছে। সব উপজেলা হাসপাতালসহ প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা রোগীর জন্য শয্যা করা হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
-খবর: নরসিংদী টাইমস থেকে নেয়া