নরসিংদীর মনোহরদীতে একটি রেস্টুরেন্টে বিএনপি কর্তৃক করোনা হেল্প সেন্টার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ অনুষ্ঠানে হামলায় দুই সাংবাদিকসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসময় দুই সাংবাদিকের ক্যামেরা ভাংচুর ও মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। তবে এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান।
হামলায় আহত চ্যানেল আই এর নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি সুমন রায়, যমুনা টেলিভিশন নরসিংদীর ক্যামেরা সহকারী ইসমাইল মিয়া ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির উদ্দিনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২০ নেতাকর্মীকে নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, সকালে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশেন ও ড্যাবের সহায়তায় করোনা হেল্প সেন্টার ও অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রিয় বিএনপির সদস্য আবদুল কাদের ভূঞা জুয়েল।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হক, একেএম বাছেদ মোল্লা ভূট্টো, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি নাসির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সামস কেনেডি, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার মিল্টন প্রমুখ।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল কবির এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোতাহার হোসেনের নেতৃত্বে ৩০-৪০জন নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালায়। হামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ, মনোহরদী উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাশেদুল হাসান রুবেল, আবু নেহাল সৌরভ, রফিকুল ইসলাম, পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মাহফুজ আহমেদ, সোহাগ দেওয়ানসহ ২০জন আহত হয়েছেন। আহতদের মনোহরদী ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে জানান, দুপুরে অনুষ্ঠানের শেষ পর্য়ায়ে ১০-১৫ জনের একটি দল অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করা হয়। এসময় রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি দুই সাংবাদিকের। সেখানে গিয়ে চ্যানেল আই এর নরসিংদী প্রতিনিধি সুমন রায় ও যমুনা টেলিভিশনের নরসিংদীর ক্যামেরা সহকারী ইসমাইল মিয়াকে মারধর করে হামলাকারীরা। এক পর্যায়ে সাংবাদিক সুমনের ক্যামেরা নিয়ে ভাংচুর ও মেমোরি কার্ড খুলে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেও হামলা করা হয়। এসময় যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান ইসমাইল মিয়াকে আবারও মারধর করে ক্যামেরা ভাঙচুর এবং মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়।
নরসিংদী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার শামস কেনেডি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নাজমুল কবিরের নেতৃত্বে এই হামলা করা হয়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীসহ দুই সাংবাদিককেও আহত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঞা জুয়েল বলেন, যারা হামলা করেছে সকলেই মনোহরদী উপজেলা ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও যুবলীগের কর্মী। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করেছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল কবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির দলীয় কোন্দলের জেরে তাদের প্রতিপক্ষ লোকজনই এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের কোন্দল ঢাকতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপির কোন সম্পর্কে পুলিশ অবগত ছিল না। অতর্কিত হামলায় দুইজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। কে বা কারা এই হামলা করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি।