নরসিংদীর শিবপুরে নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকের কাজ করার সময় চারতলা সমান উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শিবপুরের সরকারী শহীদ আসাদ কলেজের নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনে ঝোলানো রশি ও বাঁশের তৈরি মাচা ছিড়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. সুমন মিয়া (১৫)। সে মাছিমপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামের উত্তরপাড়ার মো. স্বপন মিয়ার ছেলে ও শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ও পরিবারের অনটনে সম্প্রতি সে শ্রমিকের কাজ নেয়।
সুমনের পরিবারের সদস্য ও সহকর্মী নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, সরকারী শহীদ আসাদ কলেজের জন্য নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনটিতে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছিল। ভবনটিতে রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি ও মোজাইক মিস্ত্রিসহ প্রায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ছয়তলা ওপর থেকে ঝোলানো রশি ও বাঁশের তৈরি একটি মাচায় দাঁড়িয়ে চারতলা সমান উচ্চতায় কাজ করছিলেন তিনজন শ্রমিক। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ ওই মাচার যে বাঁশটিতে তিনজন দাঁড়িয়ে কাজ করছিলেন তা ভেঙে যায়। বাকী দুজন শ্রমিক ঝুলে থাকা রশিতে কোনরকমে ঝুলে থাকতে পারলেও সুমন মাটিতে ছিটকে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ধরাধরি করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুমনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন সেখানকার চিকিৎসকরা। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বর্তমানে সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়োগকারীর। শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া নিয়োগকারী কাউকে কাজে নিয়োগ করতে পারবেন না। আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যক্তিগত সুরক্ষা হেলমেট, গামবুট, নিরাপত্তা বেল্টসহ কোনরকম নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই কাজ করছিলেন সেখানকার শ্রমিকেরা।
এই বিষয়ে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, পেটের দায়ে আমরা কাজ করি। এসবের কথা বললে আমাদের কাজে নেয় না।
ভবনটির নির্মাণকাজের সহকারী ঠিকাদার মো. মাহবুব আলম জানান, দুর্ঘটনার পরপরই আমরা যত দ্রুত সম্ভব সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছি। এখানকার চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি এক্সরে করা হয়েছে। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি কেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এতদিন আমরা কোন শ্রমিককেই নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিইনি। তবে আমরা এখন থেকে সব শ্রমিকের জন্যই নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হবে।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকের কাজ করার সময় চারতলা সমান উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার খবর শুনেছি। কিন্তু এই ঘটনায় কোন অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। আহত শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।