সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা সহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নরসিংদী রেল স্টেশনে পাড়ি জমাচ্ছেন শত শত যাত্রী। কিন্তু এ স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে আন্তঃনগর টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায়, ঢাকা যাওয়ার এক মাত্র ভরসা তিতাস কমিউটার ট্রেন সার্ভিস, কর্ণফুলী সহ চট্টগ্রাম ও সিলেট মেইল।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিতাস কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সবুজ নামে এক ব্যক্তির অসাদু ব্যবহার, অনিয়মের জন্য অসন্তোষ ও ক্ষোভপ্রকাশ করেন যাত্রীরা। তিতাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম করছে এমন দৃশ্য চোখে পড়লে যাত্রিরা তার প্রতিবাদ করে। এ সময় আরমান নামে এক যাত্রীকে ‘পিলারে বাইন্দা ভাইরামু’ বলে হুমকি দেয় সবুজ নামে টিকিট বিক্রির এক এজেন্ট।
যাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ ও হুমকি দিয়ে কথা বলা সবুজের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নরসিংদী জেলার রায়পুরা এলাকায় জন্মস্থান তার। বর্তমানে নরসিংদী পৌর এলাকার বাসিন্দা সে। বাবা হাজী আবু সাইদ স্থানীয় একজন সার বিক্রেতা। মেসার্স টি এম ট্রেডিং পরিচালিত ৩৫ নং তিতাস কমিউটার ট্রেন সার্ভিস ও কর্ণফুলী ট্রেনের এজেন্ট হয়ে টিকিট বিক্রেতা সে।
এ বিষয়ে নরসিংদীতে দায়িত্বে থাকা স্টেশন মাস্টার এটিএম মূসাকে অবগত করা হলে তিনি সবুজের এ আচরনের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া রেল স্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এ স্টেশন থেকে রেল ভ্রমন করতে হলে পাঁচ দিন পূর্বে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। এ ছাড়া অনেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করে রেল ভ্রমন করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রেলের যাত্রাবিরতী কালে কাউন্টার থেকে কোন টিকিট সংগ্রহ করা যায় না। এতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত অথোরিটি অধিনস্থ মেসার্স টি এম ট্রেডিং পরিচালিত ৩৫ নং তিতাস কমিউটার ট্রেন সার্ভিসটি ও কর্ণফুলী রেলটি যাত্রীদের একমাত্র ভরসা।
রেলের নিয়মিত যাত্রী আলী আকবর শেখ জানান, নরসিংদী স্টেশনের প্রধান ফটকের সামনে টিনের তৈরী একটি কাউন্টারে টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম যেন প্রতিদিনের চিত্র। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে এখানকার লোকজনদের হাতে যাত্রীদের লাঞ্ছিত হতে হয়। এছাড়া এখানে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া রেলের আসন মিলে না।
ঢাকাগামী তিতাস ট্রেনের ভিতরে দেখা গেছে এই করোনা প্রকোপে ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি হয়ে নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমন করছেন। এ সময় জানতে চাইলে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রী সোহেল জানান, রেলে চলাচলে আরামদায়ক ও যানজট বিহীন। কিন্তু তিতাস ট্রেনে বাদুরের মত ঝুলে, অনেক কষ্ট করে রেলে যাতায়াত করি। ব্রাহ্মনবাড়ীয়া কাউন্টারে কোন টিকিট সংগ্রহে করতে গেলে কোন আসন পাওয়া যায় না। তবে ব্ল্যাকে টিকেট সংগ্রহ করে রাখে এক শ্রেণীর দালালরা। তাদের কাছ থেকে একটি আসনসহ ৬০ টাকার টিকেট ১৫০টাকা দিয়ে নিতে হয়। গরীব বলে আমাদের দ্বারা তা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া তিতাস ট্রেনে নরসিংদী থেকে শত শত যাত্রী উঠে তাদের অবস্থা নাজুক।
তিতাস ট্রেনে নরসিংদী থেকে ঢাকা-কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত একজন যাত্রীর ভ্রমন ফি ত্রিশ টাকা। তবে দেখা গেছে বিনা টাকায় ভ্রমন করছে শত শত যাত্রী।
নরসিংদী রেল স্টেশনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।