সোমবার ১১অক্টোবর ২০২১ খ্রি. (২৪আশ্বিন, ১৪২৮ বাংলা) মহাপঞ্চমী ও মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী সনাতন হিন্দু ধর্মীয় সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। দেবী এবার ঘোটকে আগমন করেছেন এবং দোলায় গমন করবেন। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার বিজয়া দশমী পূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতিপূর্বে শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সরকারি বেসরকারিভাবে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় সভার সভাপতি নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান নরসিংদী জেলার সকল উপজেলার পূজামন্ডপ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক,সলক বিভাগীয় প্রধান,গণমাধ্যম কর্মী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ সকলকে শারদীয় দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ মূলমন্ত্রের মাধ্যমে আবহমান কাল হতে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে শারদীয় দুর্গোৎসব। সম্প্রীতির জনপদ নরসিংদীতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও যথাযথ মর্যাদায় সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
তিনি সভায় বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ,স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,ধর্ম মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য করণীয় বা গৃহীতব্য ব্যবস্থাদি সম্বলিত যাবতীয় দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন।
এ জেলায় এবছর জেলায় মোট ৩৫৩টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ৯৮টি,পলাশে ৪৫টি,শিবপুরে ৭০টি,মনোহরদীতে ৫১টি,বেলাবতে ২৩টি এবং রায়পুরাতে ৬৬টি পূজামন্ডপে পূজা উদ্যাপিত হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক)মোঃ মোস্তফা মনোয়ার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম,সিভিল সার্জন ডা. মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সূর্য্যকান্ত দাস, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী,নরসিংদী প্রেসক্লাব সভাপতি মাখন দাস, বেলাব পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীরেশ্বর চক্রবর্তী,পলাশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কার্তিক গুহ, শিবপুর কমিটির সভাপতি বিপ্লব চক্রবর্তী,জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা,জেলা পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অনিল চন্দ্র ঘোষ,জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অহিভূষণ চক্রবর্তী,জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সুব্রত কুমার দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় নরসিংদীর পুলিশ সুপার বলেন, পূজা চলাকালীন সময়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। পূজা মন্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, কোন অপশক্তি যেন কোন অঘটন ঘটাকে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে। আকস্মিক যে কোন ঘটনা কন্ট্রোল রুমকে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে তাৎক্ষণিক। তিনি ডিজে সেট না বাজানোর জন্য সকল পূজা মন্ডপের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ করেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
# দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ,স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,ধর্ম মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা।
# করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে মন্দির/পূজা মন্ডপে ভক্তবৃন্দ/দর্শনার্থীদের অতিরিক্ত ভীড় পরিহার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাধ্যতামূলকভাবে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য পৃথক পথের ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ। সামাজিক দূরত্ব(৩ফুট শারীরিক দূরত্ব) বজায় রাখা এবং প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক স্প্রে,বাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন এর ব্যবস্থা রাখা।
# সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিহিত থাকতে হবে। মাস্কবিহীন কাউকে মন্দির বা পূজা মন্ডপে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। প্রত্যেক ভক্ত বা দর্শনার্থীর শারীরিক তাপমাত্রা বা জ্বর থার্মাল যন্ত্র দিয়ে তাপমাত্রা মাপতে হবে। জ্বর,হাঁচি, কাশি,ফুসফুসের সংক্রমণ ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং বয়স্ক ও অতি বয়স্কদের পূজা মন্ডপে আগমন নিরুৎসাহিত করা।
# মন্ডপের সেচ্ছাসেবক আর্ম ব্যান্ড ও পরিচিতি কার্ড গলায় পরিধান করা থাকবে।
# সকল ধরণের আতসবাজী ও পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে সকলে। পূজা মন্ডপে মাদকাসক্ত এবং নেশাগ্রস্থ দর্শনার্থীর প্রবেশ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ থাকবে।
# সকল প্রকার আলোকসজ্জা,সাজসজ্জা,মেলার আয়োজন,আরতি প্রতিযোগিতা,সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ইত্যাদি পরিহার করা। এছাড়াও ধর্মানুভূতিতে আঘাত অনুভূত হয় এরূপ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা সহ ডিজে সেট,পি.এ সেটে সংগীত বাজানোসহ আজানের সময় ঢাক-ঢোল বাজনো থেকে বিরত থেকে পূজা অনুষ্ঠান করা। সম্পূর্ন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করা যাবে। কোন অবস্থাতেই পূজামন্ডপে একাধিক পেয়ারের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে একটি হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করা যাবে।
# মন্দিরের অবস্থান অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প সংখ্যক ভক্ত নিয়ে পর্যায়ক্রমে সামাজিক দূরত্ব মেনে একাধিকবার অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
# আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহ সার্বিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে এবং সকল উপজেলায় পূজা উপলক্ষ্যে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্বে ভিজিলেন্স টিম গঠন নিশ্চিত করা।
# প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি,হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
# নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরী প্রয়োজনে প্রতিটি পূজা মন্ডপের দৃশ্যমান জায়গায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,ফায়ার সার্ভিস ও পূজা মন্ডপের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মোবাইল নম্বরসমূহ আবশ্যিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
# কোন প্রকার গুজবে কান না দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনা অবহিত করতে হবে। যে কোন সমস্যায় “৩৩৩” ও “ ৯৯৯” নম্বরে ফোন করতে হবে। সেক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম-পরিচয় গোপন থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
# স্থানীয় বখাটেদের কর্তৃক মন্ডপে আগত নারী শিশুদের উত্যক্ত করা,ইভটিজিং, মাদক সেবন ইত্যাদি রোধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
# ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক সকল পূজা মন্ডপের সভাপতিকে নামাজের সময়সূচী অবহিত করণের ব্যবস্থা করতে হবে।
# পূজা মন্ডপের জন্য হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থ উপজেল নির্বাহী অফিসারগণের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে।
# অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ মোস্তফা মনোয়ার এর নেতৃত্বে স্থাপিত একটি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপন এবং এর মাধ্যমে জেলার সকল মন্ডপের সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখা হবে।
# বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দলকে প্রস্তুত থাকবে এবং সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
# প্রতিমা বিসর্জন কালে কোন র্যালি বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। বিজয় দশমীতে সংঘ বা ক্লাব ও স্ব স্ব থানায় নিজ নিজ উদ্যোগে সুবিধাজনক জলাশয়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে।