নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল মাধবদীতে একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভরাট করা এসব পুকুরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, কারখানা, মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির উৎস না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সম্পদ। অবাধে পুকুর ভরাট বন্ধ না হলে খুব দ্রুতই মাধবদী শহর ও আশেপাশের এলাকা পুকুর শূন্য হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, শিল্পশহর মাধবদী ও আশেপাশের এলাকায় পুকুর, ডোবা ও জলাশয়ের সংখ্যা ছিল অর্ধশতাধিক। গত এক যুগের ব্যবধানে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ভরাট করা হয়েছে অর্ধশত পুকুর ও ডোবা। বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমিতি এসব পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন, শিল্পকারখানা, মার্কেট, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মাধবদীর নতুন থানা ভবন সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহি তারাপুকুর। বিশাল আকৃতির এই পুকুরটির অর্ধেকই ভরাট করে শিল্পকারখানা করেছে জজ ভূঞা গ্রুপ নামের একটি শিল্পগ্রুপ। নওপাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট করেছে জজ ভূঞা গ্রুপ, হেরিটেজ রিসোর্টসহ অন্যান্য শিল্পমালিকরা। এছাড়া সোনার বাংলা সমবায় কটন মিল মাধবদী বাজারের তিনটি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করেছে। বিরামপুর এলাকায় মুন্সী দিঘী নামে পরিচিত একটি বিশাল পুকুর ভরাট করেছে লুমিনা গ্লোবাল লিমিটেড। ভরাট হয়েছে চৈতাব এলাকার একটি বড় পুকুর। একইভাবে শুধু মাধবদী পৌর শহর নয় এর আশেপাশের এলাকায়ও শিল্পোন্নয়নের বলি হচ্ছে পুকুর, জলাশয় ও ডোবা।
পৌর শহরের ধোপাবাড়ির পুকুরটি অবশিষ্ট থাকলেও রক্ষনাবেক্ষন না থাকায় দূষিত হয়ে গেছে এর পানি। এতে গোসল ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচারানুষ্ঠানসহ প্রাত্যহিক কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা। অবাধে পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া অগ্নিকান্ডের সময় পানির উৎস না পেলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের।
স্থানীয় কবি ও লেখক এমদাদুল ইসলাম খোকন বলেন, তদারকি না থাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাধবদী শহর ও আশেপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক পুকুর, ডোবা ভরাট হয়ে গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত এসব পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পকারখানা, মার্কেট, বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। উন্নয়নের নামে এসব পুকুর ভরাট চলে আসলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই।
মাধবদী পৌর শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমে শহরের প্রায় সব পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এতে জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হওয়াসহ শহরের পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে গেছে। অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনী কোথাও পানির উৎস খোঁজে পাবে না।
মাধবদী পৌর এলাকার বাসিন্দা লক্ষণ দাস বলেন, শহরে একমাত্র ধোপাবাড়ির পুকুরটি ভরাট বাকী আছে। এই পুকুরে শহরের মানুষ গোসল, প্রাত্যহিক কাজ ও হিন্দু ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান পালন করা হতো। কিন্তু তদারকি না থাকায় এই পুকুরটির পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার শিবু দাস ও উমর ফারুক বলেন, জমির মূল্য বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়ার আশায় যে যেভাবে পারছে পুকুর ভরাট করেছে। বেশিরভাগ ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কেউ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ সহকারী পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, অবাধে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কমছে পুকুর, ডোবা ও জলাশয়। এতে অগ্নিকান্ডের সময় পানির উৎস না পেলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে। শিল্পএলাকায় পানির উৎসব থাকা খুবই জরুরি।
পরিবশে অধিদপ্তর নরসিংদীর উপ পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পুকুর, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, শ্রেণি পরিবর্তন করা পরিবেশ আইনের লঙ্গন। ভরাটের অভিযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
– আসাদুজ্জামান রিপন-নরসিংদী টাইমস