করোনার ভয় কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। গতকাল সোমবার একই সঙ্গে পঞ্চমীর বোধন এবং ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের। মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বোলে যেন ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের হৃদয়তন্ত্রীতে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার। শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য। দেশের হাজার হাজার পূজামণ্ডপ এখন উৎসবে মাতোয়ারা। দল বেঁধে পূজা দেখতে ছুটছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) মহাসপ্তমীর দিনে ভোরে নবপত্রিকা প্রবেশ ও ঢাক-ঢোল-কাঁসর বাজিয়ে দেবী দুর্গার তিথিবিহিত পূজা শেষে সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শাস্ত্রমতে, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচার (ষোলো উপাদান) দিয়ে দেবীকে বরণ ও পূজা-অর্চনা হবে। আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য ও চন্দন দিয়ে পূজা করা হবে দেবীকে। এরপর কৃপালাভের আশায় দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। পর্যায়ক্রমে আগামীকাল বুধবার মহাঅষ্টমী, বৃহস্পতিবার মহানবমী ও শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এবার দেশজুড়ে ৩২ হাজারের কিছু বেশি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। ঢাকায় পূজা হচ্ছে ২৩৮টি মন্ডপে। গেল বছরের তুলনায় পূজা বেড়েছে ১ হাজার ৯০০। রাজধানীতে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ফার্মগেটের খামারবাড়ী ও গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামন্ডপে এবার মহাসমারোহে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
করোনা মহামারি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা। এজন্য মন্ডপে আগতদের মাস্ক পরতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সতর্কতা হিসেবে এবারও ব্যাপক জনসমাগম হয় এমন আয়োজনে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিজয়া দশমীর আকর্ষণ শোভাযাত্রা হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গেলবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির কারণে দর্শনার্থী ছিল কম। তবে এবার যেহেতু পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাই দর্শনার্থী বাড়বে বলে আশা করছি। নিরাপত্তাও জোরদার করাসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী এবার দেবীদুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। আর ফিরে যাবেন দোলায় চেপে। দেবীর ঘোড়ায় চেপে আগমনের ফল হলো ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে ঘটবে অস্থিরতা। বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা বাড়বে। আর দোলায় চেপে দেবীর বিদায়ের ফল হলো ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’। অর্থাৎ মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ খরার প্রভাব দেখা দেবে। হানবে ক্ষতি ও মৃত্যু।