নরসিংদীর রায়পুরায় হত্যাকারির নাম না দিয়ে নিরপরাধ ১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। এ মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করে তাদের বাড়ি ভাঙচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় গ্রামে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে। ৬০টি বাড়িতে চালানো ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
মঙ্গলবার(১২ অক্টোবর) ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া বাদী হয়ে ৫৪ জনকে আসামি করে থানায় একটি ভাঙচুর ও লুটে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত দুই মুলহোতাকে গ্রেপ্তার করেন। তারা হলেন, উপজেলার কুঁড়েরপাড় গ্রামের মৃত ছাদির মিয়ার ছেলে এরশাদ মিয়া (৩৩) ও মৃত জব্বার মিয়ার ছেলে ইদু মিয়া (৬০)। গ্রেপ্তরা হওয়া ওই দুজনের নেতৃত্বেই ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এরশাদ ও ইদুকে আদালতের মাধ্যমে নরসিংদীর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার কুঁড়েরপাড় গ্রামের চাচাতো ভাই শহীদ মিয়া ও তার ছেলে রাকিব মিয়ার সঙ্গে আলমগীর হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তাদের মধ্যে মারামারিও হয়। এরই জেরে ওই দিন সকাল ১১টায় রাকিব দা দিয়ে আলমগীরে মাথায় কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
আলমগীর হত্যার চার দিনের মাথায় (২৯ সেপ্টেম্বর) তার বড় ভাই জুলহাস মিয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় মুল হত্যাকারী রাকিরের নাম বাদ দিয়ে গ্রামে ১৩ জন নিরপরাধ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে আসামি। এরপর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাঁরা। এ দিকে আলমগীর হত্যার পর এরশাদ ও ইদুর নেতৃত্বে গ্রামের ৬০টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী সারোয়ার বলে, তার বাবা সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ এলাকায় ব্যবসা করেন। সে সুবাধে সেখানে তার পরিবার বসবাস করেন। গ্রামের বাড়িতে ঈদ বা বিশেষ কারণ ছাড়া আসা হয় না। আলমগীর হত্যা সময় তার বাবা আব্দুল মালেক ও ছোট ভাই বিশ^বিদ্যালয় পরীক্ষার্থী জুনায়েদ মিয়া ছিলেন সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে। তাদের দুজনকে আলমগীর হত্যা মামলায় আসামি করে বাদী পক্ষ। এ ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সারোয়ার।
মাহফুজা বেগম বলে, ভাতিজার হাতে চাচা খুন হয়েছে। কিন্তু হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে তার স্বামী আব্দুল খালেক মিয়াকে। হত্যাকান্ডের সময় তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গিয়েছিলেন দোকানের মালামাল আনতে। এ ঘটনার পর তাদের বাড়িসহ ৬০টি বাড়ি ভাঙচুর ও মালামাল লুটে করে এরশাদ-ইদু ও তার লোকেরা জানান মাহফুজা। নিরপরাধ ১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার করার কারণ জানতে হত্যা মামলার বাদী জুলহাস মিয়াকে ফোন করা হলে তা বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে এলাকায় অভিযান অব্যাহ রয়েছে। হত্যা মামলার বাদী যদি নিরপরাধ কাউকে আসামি দিয়ে থাকে এব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে তিনি।