গত কয়েকদিনে ধরে দেশের বাজারগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম। মাছ, মাংস, মুরগি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেলের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। যেখানে আগাম মৌসুমি সবজির আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কমার কথা, সেখানে বাড়তি দামে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন ক্রেতারা।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর শুক্রাবাদ কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান, খিলক্ষেত বাজার ঘুরে দেখা যায়- মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের দামই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। ছুটির দিন হওয়ার এসব বাজারে অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষজনের উপস্থিতিও ছিল বেশি।
পেঁয়াজের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও আলু, টমেটো, বেগুন, করলা, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সবধরনের শাক সবজিই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
কয়েকদিন আগেও কেজি প্রতি ৫০-৫৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া বেগুন দাম এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ আগে ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও আজ হয়েছে ১৪০ টাকা। রসুন কেজি প্রতি ১৩০-১৪০ টাকা যার পূর্বমূল্য ছিল ১২৫ টাকা। গোল আলুর দাম হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ টাকা যার আগের দাম ২০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে আদা ১৩০-১৪০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ টাকা কেজি, গাজর ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব সবজি মাত্র এক সপ্তাহ আগেও পাওয়া যেতো ৫-১০ টাকা কমে। বাজারে লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক আঁটি প্রতি ১৫-২০ টাকা ও লাউ শাক ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মুদি দোকানগুলোতে ভোজ্য সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়।
খিলক্ষেত কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা হাফিজ মিয়া বলেন, পাইকারি সবজি কিনতে আমাদের অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। সেই প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। তবে শীতের সবজির আমদানি বাড়লে দাম কমবে। এর আগ পর্যন্ত এই কয়েকদিন বাজার চড়া যাবে।
এদিকে হঠাৎ এই সবজির এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। আকলিমা সুলতানা দিবা নামের এক ক্রেতা বলেন, ১৪০ টাকা দিয়ে এক কেজি মরিচ কিনতে হচ্ছে। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নাই। আমরা সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচব? বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে ঠিকই কিন্তু আয় বাড়েনি।
অপরদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতো থাকলেও ব্রয়লার মুরগির দাম পৌঁছেছে ১৮০ টাকায়। গরু ৬০০ টাকা, খাসির ৯০০-১০০০ টাকা, লেয়ার ২৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিম ৩৮-৪০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ৩৬ টাকায়।
স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি রুই ৩৫০-৩৮০ টাকা, কাতলা ৩৪০-৩৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২০০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৬০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ১৯০-২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০-১৯০ টাকা, গ্রাস কার্প ১৫০-১৭০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০-৭৫০ টাকা ও শিং মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ছোট কাচকি ৩৫০ টাকা ও মলা মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানগুলোতে সয়াবিন তেল ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ডাল ৯৫-১০০ টাকা ও চিকন ডালের দাম ১০০-১১০ টাকা। চালের বাজার রয়েছে অপরিবর্তিত। নাজির শাইল ৬৫-৭০ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা, ও আটাশ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি থেকে নিস্তার চায় সাধারণ মানুষ। সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের দাম আগের মতো সাভাবিক করার জন্য সরকারের কাছে দাবি ভোক্তাদের।