পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রতিশ্রুত পায়রা সেতু খুলে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এতে শেষ হলো বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ফেরির দিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় গনবভন থেকে ভার্চুয়ালি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল-পটুয়াখালীর একটা সংযোগ সৃষ্টি করবে এই পায়রা সেতু। কারণ পায়রা নদীর ওপর সেতু। নদীর নামে সেতুর নামটা হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। এজন্য আমি নামটা পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক, কাজেই এ অঞ্চলে এই সেতু হবার পর মানুষের যে আর্থিক উন্নতিটা হবে, তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে, মানুষ সুন্দরভাব বাঁচতে পারবে।’
পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে আরও দ্রুত যাওয়া যাবে এই অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলোতে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীর ওপর পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা, যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করেছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাপেক ফান্ড।
১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এ সেতুর উভয় পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, এই সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অতিরিক্ত ওজনবাহী গাড়ির কারণে ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে মনিটরিং সিস্টেম থেকে। পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ।
৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে, যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে।
এদিকে ফেরি চালকদের শেষ কর্মদিবসেও কর্মব্যস্ততার কমতি নেই। বরং গাড়ির চাপ বেশি। মূলত সাধারণ পরিবহনের সঙ্গে অতিথিদের গাড়ি এই চাপ বাড়িয়েছে। তবে ফেরি স্টাফদের শেষ কর্মদিবসে স্মৃতিকাতর হলেও আক্ষেপ নেই তাদের। তবে সেতু উদ্বোধনকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
১৮ বছর ধরে ফেরির চালক হিসেবে পটুয়াখালী ফেরি বিভাগের লেবুখালী ঘাটে ফেরি চালান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এখানে দীর্ঘ বছরের স্মৃতি। শেষ কর্মদিবস হিসবে একটু খারাপ লাগলেও সেতু উদ্বোধন ভালো লাগছে। এভাবে দেশ এগিয়ে যাক উল্লেখ করে জাকির হোসেন বলেন, দুপুর ২টার পর আর কোনোদিন এই ঘাটে ফেরির হুইসেল বাজবে না। আমাকে বগা ফেরিঘাটে পোস্টিং দিয়েছে। সেখানে হয়তো ৫/৬ দিনের মধ্যে যোগ দেব।