দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড এর চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার পরিকল্পনার প্রতিবাদে ও হত্যার নির্দেশদাতা হুইফ সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর পুত্র শারুন চৌধুরীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে নরসিংদীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদী সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিভিন্ন পেশাজীবীরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হত্যার পরিকল্পনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংঠনের নেতৃবৃন্দ।
এরআগে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার সন্দেহের অভিযোগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে ভাটারা থানা পুলিশ। আটক হওয়া সাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
নরসিংদীর মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বাবু নিবারণ রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী। তাদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকা পরিচালিত হচ্ছে। আর এ কারণে তাদের সুনামে ঈষার্ন্বিত হয়ে একটি গোষ্ঠী বারবার তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। আমরা তাঁর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু প্রীতি রঞ্জন সাহা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি জানাচ্ছি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সাহেবকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করেছে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হউক।
সাতদিনের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হামিদুল হক আহাদ বলেন, আমরা শুনেছি বসুন্ধরার এমডি সাহেবকে প্রথমে দুধে বিষ মিশিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে শুক্রবার জুমার নামাজে হামলার প্রস্তুতি নেয় একটি চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় সাদ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমরা তাঁর ও হত্যার নির্দেশদাতাদেও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নরসিংদী বাজারের ব্যবসায়ী নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের আইকন হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর সাহেব। পূর্ব শত্রুততার জের ধরে আনভীর সাহেবকে চট্টগ্রামের পটিয়ার সাংসদ হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর ছেলে শারুন চৌধুরী যে হত্যার পরিকল্পনা আমরা তাঁর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নরসিংদী শহর শাখার সাধারন সম্পাদক ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘ নরসিংদী জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম মাছুম বলেন, শুরুতেই ব্যবসায়ী সমাজের আইকন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে হত্যার পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তারপর আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই, আমরা সবসময় দেখে আসছি একটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটার পর সবাই সোচ্চার হয়। প্রতিবাদ করে। কিন্তু আজ আমরা হত্যার ঘটনা পূর্বেই আপনাদের হত্যার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতার নাম প্রকাশ করছি। আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
এদিকে ভাটারা থানা সূত্র জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত সন্দেহে সাইফুল ইসলাম সাদকে আটক করা হয়। গতকাল শুক্রবার তাকে ৫৪ ধারায় করা জিডির সূত্রে আদালতের মাধাম্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় সায়েম সোবহান আনভীরের ওপর হামলার প্রস্তুতি ছিল তার। এর আগে তাকে খাবারে বিষ মিশিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সাদ আরো জানান, দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির হাউজে কাজ নেন। তিনি খামার থেকে বাসায় দুধ নিয়ে আসার কাজও করতেন। গত পূজার ছুটিতে পটিয়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে স্থানীয় মান্নান নামের এক ব্যক্তি তাকে এলাকার সাংসদ ও হুইপ সামশুল হকের কাছে নিয়ে যান। এরপর তার ছেলে শারুন চৌধুরীর সঙ্গেও সাদকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেন শারুন।
সাদ জানান, বিশ্বাস অর্জন করার জন্য তিনি এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মাদরাসায় ভর্তি হন। ওই মাদরাসা থেকেই শুক্রবার(৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় তাকে আটক করে পুলিশ।