সারাদেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে নরসিংদী জেলায়। এতে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ৯ পরিবার হারিয়েছে তাদের আপনজন। জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন প্রাণ হারান। এর আগে ৪ঠা নভেম্বর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন ও ২৮শে অক্টোবর রায়পুরার চরাঞ্চল পাড়াতলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা যান।
রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতরা হলেন, কাচারিকান্দি এলাকার মলফত আলীর ছেলে সাদির মিয়া (১৯), আসাদ মিয়ার ছেলে হিরণ মিয়া (৩৫)। এছাড়া এ সংহিসতায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই গ্রামের সোলেমান মিয়া (৫০)। নরসিংদী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের আলোকবালী ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- ওই ইউনিয়নের নেকজানপুর এলাকার মৃত: কডু মিয়ার ছেলে আমির হোসেন (৫০), আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে আশরাফুল হক (২০) ও আব্দুল হক মিয়ার স্ত্রী খোরশেদা বেগম খুসু (৪৫)।
রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন, বাঁশগাড়ির বালুয়াকান্দি গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে মো: সালাউদ্দিন মিয়া (৩০), বটতলীকান্দি গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬) এবং সোবহানপুর গ্রামের আব্দুল হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৬)। নিহত সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বিজয়ী প্রার্থী রাতুল হোসেন ওরফে জাকির হোসেনের সমর্থক এবং দুলাল মিয়া নৌকার প্রার্থী আশরাফুল হকের সমর্থক ছিলেন।
গত ১০ বছরে নরসিংদীর চরাঞ্চলে আধিপত্য ও রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সহ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে সুষ্ঠু সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের জন্য তৎপর রয়েছে নরসিংদীর প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যন্ত চরাঞ্চল গুলোতে শুরু হয়েছে অভিযান। এরই মধ্যে সবশেষ মঙ্গলবার রাতে রায়পুরায় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আগ্নি অস্ত্র, ২টি পাইপ গান, ৩ রাউন্ড রাবার বুলেটসহ ১ জন ও দাঙ্গা হাঙ্গামা করার অভিযোগে ২ জনকে আটক করে রায়পুরা থানা পুলিশ।