জাতির পিতাকে হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের পরিচয় দিতে ভয় পেতেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল।’
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে আজ রবিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো—মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের মানুষ যে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যে অবদান রেখেছিল, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে এমন একটা সময় এসেছিল যে, যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেই ভয় পেতেন।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারা (বীর মুক্তিযোদ্ধারা) নিজেদের পরিচয় দিতে পারতেন না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। একটা মনগড়া ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের নিজেদের বিজয়গাঁথা কখনও বিকৃত করা হয় না। কিন্তু সে ধরনের একটা জঘন্য কাজ আমাদের দেশে করা হয়েছিল।’
এর আগে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২১’ উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা জানান।
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পৃথকভাবে আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানায়। পরে সেখানে পরিদর্শক বইয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছানোর পর সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনীপ্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে স্বাগত জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠান শেষে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তিন বাহিনীর প্রধান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানি দখল বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় এবং এর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে দিনটি উদ্যাপন করা হয়।