নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নে কুঁড়েরপাড় গ্রামে উচ্ছেদ হওয়া একটি পরিবার শনিবার (৪ ডিসেম্বর) র্যাব-১১ এর সহযোগিতায় বাড়ি ফিরতে গিয়ে র্যাবের ৩ সদস্য ও পরিবারটি ৪ জন স্থানীয় এরশাদ গ্রুপের হামলায় আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় র্যাব দেশী অস্ত্রসহ বাচ্চু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। সে কুঁড়েরপাড় এলাকার মৃত ছাদির মিয়ার ছেলে। তার কাছ থেকে ৩টি টেঁটা ও ২টি বল্লম উদ্ধার করা হয়।
রোববার বিকেলে র্যাব-১১ এর ডিএডি মো. রেজাউল হক বাদী হয়ে অস্ত্র উদ্ধার ও হামলার অভিযোগে রায়পুরা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় পাঁচ জন করে মোট ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, র্যাব-১১ এর কর্পোরাল হেলাল, এএসআই আসাদুজ্জামান, এএসআই আব্দুর রাজ্জাক ও ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরে কর্মরর্ত এএসআই ইউসুফ আলীর পরিবারের তার স্ত্রী, সন্তানসহ চার জন। পরে আহতদের নরসিংদীর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) এএসআই ইউসুফ আলী র্যাব সদর দপ্তরের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌহিদুল মবিন খানের নিকট লিখিত অভিযোগে জানান, উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় গ্রামের বাড়ি থেকে তার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবারটি নরসিংদী সদরে একটি ভাড়া বাসায় আছেন। ক্যাম্প কমান্ডারের নির্দেশে ওই দিনই র্যাব-১১ এর ১০ জন সদস্য ওই পরিবারটির ৫-৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে নরসিংদী সদর লঞ্চঘাট থেকে একটি ট্রলার যোগে কুঁড়েরপাড়ে রওনা দেন। পরে সেখানে পৌঁছার পর র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এরশাদ গ্রুপের লোকজন গুলি বর্ষণ, টেঁটা ও বল্লম ছুড়ে মারে। এতে র্যাবের ৩ সদস্য ও পরিবারটির ৪ জন আহত হয়। পরে জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় র্যাব ২৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েন। পরে রায়পুরা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মামলা সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত বাচ্চু মিয়া ও পলাতক আসামি এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় খুন, হত্যাচেষ্টা, মাদক ও একাধিক অস্ত্র মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার কুঁড়েরপাড়ে ভাতিজা রাকিব মিয়ার দায়ের কোপে আহত আলমগীর হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে নিহতের ভাই জুলহাস বাদী হয়ে (২৯ সেপ্টেম্বর) ২৩ জনের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। আলমগীর হত্যার ঘটনায় আসামিদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুট করে বাদী পক্ষের এরশাদ ও তার লোকজন। একই ঘটনায় এএসআই ইউসুফ আলী পরিবারটিকেও এলাকা ছাড়া করা হয়।
চাঁনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোমেন সরকার বলেন, গতকাল সকালে মুঠোফোনে একটি কল আসে। ফোনের ওপাশ থেকে র্যাব-১১ ক্যাম্পের একজন সদস্য জানান, কুঁড়েরপাড় এলাকায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে র্যাবের কয়েক জন আহত হয়েছেন। ওই সময় র্যাব আমাকে ঘটনাস্থ আসার অনুরোধ জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তাঁরা চলে গেছেন।
র্যাব-১১ এর ডিএডি ও মামলার বাদী মো. রেজাউল হক জানান, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারটি ৫ থেকে ৬ জন সদস্যকে নিয়ে চাঁনপুর ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় ঈদগা সংলগ্ন ঘাটে পৌঁছার পরই একটি গ্রæপ তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে র্যাবের তিন সদস্য ছাড়াও পরিবারটি কয়েক জন আহত হয়। এই বিষয়ে রায়পুরা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে বলে জানান তিনি।
রায়পুরা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ জানান, র্যাবের ওপর হামলা ও দেশীয় অস্ত্রসহ একজন আটকের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।