নারায়ণগঞ্জে ট্রেন-বাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪
নারায়ণগঞ্জ শহরে রেল লাইনের উপরে যানজটে আটকে থাকা আনন্দ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে (ঢাকা মেট্টো ব-১১-৪৩৭৪) ট্রেনের ধাক্কার ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪জন। নিহতরা হলেন- গাইবান্ধার মৃত যাত্রা রাম দাসের ছেলে ভট্ট রাম দাস (৫২), নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়ার ঘাড়মোড়ার মৃত মনছুর আলীর ছেলে আবুল কালাম (৬৫), একই উপজেলার ধামগড় এলাকার মেজবা উদ্দিন (৬৫) ও সদর উপজেলার ২নং বাবুরাইল ব্যাপারী পাড়ার মোক্তার হোসেনের ছেলে রিফাত হোসেন (৯)। এরমধ্যে আবুল কালাম ও ভট্ট রায় দাস ঘটনাস্থলে এবং রিফাত ঘটনার দিন রাত ১১টা ও মিজবা উদ্দিন সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ২০ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া দুই জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া এই ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে ৯ জনকে রোববার ঘটনার পর পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পঙ্গ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে রুহুল মিয়া, কাদের মোল্লা (৩৫), মিজান মিয়া (৬৫), মনা, মনির হোসেন (২৬), ও শাকিল (১২) এর নাম জানা গেছে।
ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গুরতর জখম রয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আমেনা আক্তার (৪০) নামে এক নারীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া আহতদের কেউ কেউ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের ১নং রেলগেটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা এসে হতাহতদের উদ্ধারসহ ক্ষতিগ্রস্থ বাসটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা সংশ্লিষ্ট গেটম্যানের অসর্তকতায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, বাসটি পূর্বের থেকে সিগন্যাল দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটি শহরের ১ নম্বর গেটে আসলে ট্রেন লাইনে উঠে যাওয়া আনন্দ পরিবহনের একটি (ঢাকা মেট্টো ব-১১-৪৩৭৪)বাসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি ছিটকে পড়ে। যানজটের কারণে বাসটি লেভেল ক্রসিং এ আটকা পড়েছিল। তবে ট্রেনের চালক ট্রেনটিকে থামাতে সর্বস্ব চেষ্টা করেছেন। না হলে দূর্ঘটনার বিষয়টি আরো বড় হতো। আহতদের বেশীরভাগ পথচারী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী নারায়ণগঞ্জ মেরিন ইনস্টিটিউটের ক্যাডেট খায়রুল ইসলাম জানান, ট্রেনের ইঞ্জিনের ৪টি বগির পেছনে রেললাইনের উত্তর পাশে দাড়িয়ে ছিলাম পারাপারের জন্য। ৬টার পরপর হঠাৎ ট্রেনটি থেমে যায়। ধারণা করা হয় তিন সেকেন্ডের মধ্যে ট্রেনটি থামে। বিকল শব্দও হয়। পরে সামনে এগিয়ে দেখি লাইন থেকে একটি বাসকে ধাক্কা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ গজ দুরে নিয়ে যায়। এরপর চারদিকে চিৎকার চেচাঁমেচির শব্দ। অন্ধকারে অনেক কিছু বুঝা যাচ্ছিল না। কোনমতে সামনে গিয়ে দেখি ২টা লাশ পড়ে আছে। এছাড়া একটা খন্ডিত পা পড়ে থাকতে দেখি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে।
মাথা ও মুখে রক্তাক্ত আহত গার্মেন্টস শ্রমিক আমেনা আক্তার জানান, তিনি নাস্তা নেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। হঠাৎ আখের রসের মেশিন তার উপর ছিটকে পড়ে। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কারা যেন তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।
নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সি এম আকতার হায়দার জানান, ২৩০ নাম্বার ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে কমলাপুর থেকে ৫টা ২০ মিনিটে ছেড়ে আসে। নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে পৌছানোর ১০০ গজ অদুরে শহরের দুই নম্বার রেলগেইটে ৬টা ৫ মিনিটে লাইনে উপর থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দেয়। তবে ট্রনের চালক সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার হামিদুর রহমান রহমান ঘটনাস্থল থেকে তারা দুইজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।