করোনাক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসনালী থেকে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভাইরাসটি কয়েক দিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভাইরাসটি কয়েক মাস টিকে থাকতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) শরীর এবং মস্তিষ্কে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া এবং অবস্থানের ব্যাপারে গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষকরা বলেছেন, তারা দেখতে পেয়েছেন—সংক্রামক এই ভাইরাস শ্বাসনালীর বাইরেও মানব দেহের অন্যান্য কোষেও প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশের জন্য অনলাইনে পাণ্ডুলিপি আকারে এই গবেষণার ফল শনিবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দীর্ঘকালীন করোনা রোগীদের শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে এই ভাইরাসের উপসর্গগুলো থেকে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা দায়ী বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
ভাইরাল লোডের পর শরীরের প্রতিক্রিয়া এবং যে প্রক্রিয়ায় এই ভাইরাস শরীরে দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকে সেটি বোঝার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের ক্লিনিক্যাল মহামারি কেন্দ্রের পরিচালক জিয়াদ আল-আলি বলেছেন, ‘এটি উল্লেখ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ।’
লং কোভিড নিয়ে কাজ করা মার্কিন এই গবেষক বলেছেন, লং কোভিড কেন শরীরের এত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলছে সেটি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাথা ঘামাচ্ছি। এই গবেষণা সেই আলোচনায় নতুন করে কিছুটা আলো ফেলছে। কেন লং কোভিডের কারণে মৃদু অথবা উপসর্গহীন রোগীরাও তীব্র অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য এই গবেষণা সহায়তা করতে পারে।
করোনাভাইরাস শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের বাইরে মানব দেহের কোষেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে দীর্ঘদিন ধরে এমন দাবি করছেন অনেক গবেষক। তবে এই দাবির পক্ষে এবং বিপক্ষেও অনেক মত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের নতুন গবেষণাটি মহামারীর প্রথম বছরে করোনাভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার পর মারা যাওয়া ৪৪ জন রোগীর ময়নাতদন্তের সময় নেওয়া টিস্যুর বিস্তৃত নমুনা এবং বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
এনআইএইচের কর্মকর্তা ডেনিয়েল চার্টো বলেছেন, শ্বাসনালীর বাইরে করোনার সংক্রমণের ব্যাপারে বোঝাপড়ায় পৌঁছানো এবং সংক্রামিত টিস্যু থেকে ভাইরাসটির পুরোপুরি মুছে যেতে, বিশেষ করে মস্তিষ্ক থেকে—কত সময় লাগে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কে এই ভাইরাসের উপস্থিতি কয়েক মাস ধরে থাকে।
গবেষণার ফলে বলা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর ২৩০ দিন পর্যন্ত মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গাসহ শরীরের একাধিক অংশজুড়ে সার্স-কোভ-২ আরএনএর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্লোবাল বায়োসিকিউরিটির অধ্যাপক রাইনা ম্যাকইনটায়ার বলেছেন, ‘আমরা লং করোনাকে পুরোপুরি বুঝতে পারি নাই। তবে এসব পরিবর্তন লং কোভিডের চলমান উপসর্গের ব্যাখ্যা হতে পারে।’ সূত্র: ব্লুমবার্গ