নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাঠে হারিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা। শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ছিল স্রেফ ৫ উইকেট। সেটা তুলে নিতে খুব বেশি সময় নিল না মুমিনুল হকের দল। দ্রুত গুঁটিয়ে যেয়ে বড় লিড নিতে পারল না নিউজিল্যান্ড। মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য পাওয়া বাংলাদেশ দিনের প্রথম সেশেনেই হেসেখেলে জিতে ইতিহাস গড়ল নিউজিল্যান্ডে।
আজ বুধবার টেস্টের শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে টেস্টে এই প্রথমবার কিউইদের হারানোর ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
একই সঙ্গে যেকোনো ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার জয়ের দেখা পেল মুমিনুল হকের বাংলাদেশ। কিউইদের মাটিতে তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে অবশেষে স্বপ্নের জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে খুব বাজে সময় কেটেছে বাংলাদেশের। গত চক্রে নিজেদের ৭ ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ, একটিতে করেছিল ড্র। কিন্তু এবারের চক্র শুরু হলো দুর্দান্তভাবে। তাও আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে। টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপে বড় জয় দিয়ে নতুন বছর শুরু করল মুমিনুল হকের দল।
অন্যদিকে, নিজেদের মাঠে টানা ১৭ টেস্টে জয়ের পর হারের মুখ দেখল নিউজিল্যান্ড। আর উপমহাদেশের কোনো দলের কাছে হারল ১১ বছর পর। সব শেষ ১১ বছর আগে নিজেদের মাটিতে এশিয়ার দল পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল কিউইরা। এত বছর পর হারল বাংলাদেশের কাছে।
লে ওভালে শেষ দিনের সকালেই নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। এরপর অল্প রানের লক্ষ্য টপকে মুমিনুলরা জয় তুলে নেন অনায়সে।
আজ শেষ দিনের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। রস টেইলের স্টাম্প উড়িয়ে শুরু করেন ইবাদত হোসেন। সঙ্গে উইকেট উৎসবে যোগ দেন তাসকিন আহমেদ। দুই পেসারের দিনে অল্পতেই অলআউট হয়ে যায় কিউইরা।
দিনের দ্বিতীয় ওভার ও নিজের দ্বিতীয় বলেই রস টেইলরকে বিদায় করে দেন ইবাদত। বাংলাদেশি পেসারের বল টেইলের ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে উড়িয়ে দেয় স্টাম্প। ৩৭ রানে দিন শুরু করা ব্যাটসম্যান বিদায় নেন আর ৩ রান যোগ করেই।
এর পরপরই আরেকটি উইকেট পেয়ে যান ইবাদত। ফিরিয়ে দেন কাইল জেমিসনকে। কিউই পেসার ফেরেন শূণ্যতে আর ইবাদত পূর্ণ করেন নিজের ৬ উইকেট। ৪৬ রান খরচা করে ছয় উইকেট নেন তিনি। দেশের বাইরে টেস্টে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি।
ইবাদতের জোড়া আঘাতের পর আর বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। এরপর টিম সাউদি ও রাচিনকে নিজের শিকার বানান তাসকিন। আর শেষ ব্যাটার হিসেবে ট্রেন্ট বোল্টকে বিদায় করেন মিরাজ। তাতে ১৬৯ রানেই থেমে যায় নিউজিল্যান্ড।
কিউইদের দ্রুত আউট করে মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। এই রান তুলতে ১৬.৫ ওভার সময় নেয় বাংলাদেশ। নাজমুল, মুমিনুল আর মুশফিকদের ব্যাটে অনায়সেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের পথে ৪১ বলে ১৭ রান করেছেন নাজমুল। ৪৪ বলে ১৩ রান করেছেন মুমিনুল হক। আর মুশফিক করেছেন ৫ রান।
ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে টসে হেরে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৪৫৮ রান। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দাপট দেখিয়ে অবশেষে ঐতিহাসিক জয় পেল মুমিনুল হকের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৩২৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৪৫৮
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস : (আগের দিন ১৪৭/৫) ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯ (ল্যাথাম ১৪, ইয়াং ৬৯, কনওয়ে ১৩, হেনরি ০, ব্লান্ডেল ০, টেইলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়্যাগনার ০*, বোল্ট ৯*: তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, শরিফুল ১২-২-৩০-০, মিরাজ ২২-৫-৪৩-০, ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মুমিনুল ৪-০-৭-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৪০) ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; বোল্ট ৫-৩-৪-০, সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১২-১, ওয়্যাগনার ৩-১-৪-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইবাদত হোসেন।