আমাদের প্রধান খাদ্যের মৌসুমি ফসল ধান বাড়ি তুলতে চাষীরা বুনছেন স্বপ্ন। এবারের ইরি-বোরো মৌসুমে কুয়াশামাখা শীত উপেক্ষা করে নরসিংদীর রায়পুরায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।
সরেজমিন ঘুরে, নরসিংদীর বৃহত্তর উপজেলা রায়পুরার মুছাপুর, মির্জাপুর, মহেষপুর, বাঁশগাড়ী, পাড়াতলী, শ্রীনগর, অলিপুরা, উত্তর বাখর নগর, পলাশতলী, হোগলাকান্দিসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানিসেচ। চাষীরা জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ, পানি সেচ, সার প্রয়োগ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ, মই দিয়ে চলছে জমি সমান করার কাজ। আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কৃষকরা। আমন ধানের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকদের বোরো আবাদে আগ্রহ বেড়েছে।
এ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রায়পুরার ২৪টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চলতি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ইতিমধ্যে ৪ হাজার ২শর অধিক কৃষকের মাঝে কৃষি প্রণোদনার সার কীটনাশক বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর বোরো লক্ষ মাত্রা ছিলো ১ হাজার ৮০ হেক্টর। চলতি বছর ১হাজার ১শ ১১ হেক্টর ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ও বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাঁড়িয়ে যাবার আশা করছেন কৃষি বিভাগ। বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল প্রায় ৫১৭ হেক্টর জমিতে। একসাথে বেশিরভাগ চাষীরা বোরো আবাদ শুরু করায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়া। ফলে মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবিকার তাগিদে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা শ্রমিকরা প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন। দাম ভালো পাওয়ায় খেটে খাওয়া দিন মজুর মানুষ গুলো খুব আনন্দিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, বোরো ধান লাগানো শুরু করছি। শ্রমিকের দাম বেশি। কাজের লোকের অভাবে নিজেরাই ধান লাগাইতাছি। কৃষি অফিস থেকে সর্ব সময় সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। ধানবীজ ও সারও পেয়েছি। এতে করে আমার অনেক উপকার হয়েছে।
পূর্বহরিপুর গ্রামের কৃষক মুজিবুর, বাদল, আব্দুল রহমান বলেন, পুরোদমে ধান লাগাচ্ছি। শ্রমিক সংকট জমি লাগাতে জনপ্রতি শ্রমিককে ৫শ থেকে ৬৫০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। শ্রমিকের দাম বেশি থাকায় নিজেও দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
এসময় বীজ রোপনের ব্যস্ততায় মাঝে কথা হলো চাষী আব্দুস সালাম এর সাথে। তিনি বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি সেচ ও চাষে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ধান চাষ নিয়ে বিপাকে আছি। তবুও আশায় বুক বেঁধে ধান রোপণ করেছি। ভালো ফলনের আশায় কাজ করে যাচ্ছি।
কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে ধান চাষ অনেক খরচের বিষয়, আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকই বর্গা চাষী। এদের নিজের জমি নেই, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। এছাড়াও প্রতিটি জমিতে পানি সেচের সুব্যবস্থা না থাকায় বেশি টাকা ব্যয় করে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার সামথ্য সবার নেই। চলতি মৌসুমে আমি ৫ বিঘা জমিতে চারা রোপন করেছি। রোপনের সময় দিগুণ টাকা খরচ হয়েছে। দাম নিয়ে খুবই চিন্তিত।
রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বনি আমিন খান জানান, উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ করা হয়। তবে তেলের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাবে চাষাবাদে ব্যায় বাড়তে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা সবদাই কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আশা রাখি বড় ধরনের কোনো দূর্যোগ না এলে আর আবহাওয়া ধান চাষের অনুকুলে থাকলে চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছি।