আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া কার্যক্রম শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রথম ধাপে ১০ গ্রাহককে ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৬ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মোট ৪৮৫ জন গ্রাহকের মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ গ্রাহককে এই টাকা ফেরত দিল আলেশা মার্ট। বাকিদের টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তথ্যমতে, এসক্রো সার্ভিস গেটওয়ের মাধ্যমে কয়েক শ’ গ্রাহক ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। এসব টাকা আলেশা মার্টের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। গ্রাহকদের এই টাকা বুঝিয়ে দেওয়া উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, আলেশা মার্টের কাছে গ্রাহকদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আটকে আছে। কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রায় ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা দেওয়ার মতো অর্থ তাদের নিজেদের কাছে নেই। এ জন্য আলেশা মার্ট শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন।পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ নেওয়ারও চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত অক্টোবর শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে আলেশা মার্টের ৫৬টি হিসাবের সন্ধান পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব হিসাবে বিভিন্ন গ্রাহক ২ হাজার এক কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা করেছেন। এরমধ্যে আলেশা মার্ট এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। হিসাবগুলোতে ওই সময় ২ কোটি ৭ লাখ টাকা স্থিতি ছিল। গ্রাহকদের জমা টাকা তুলে নিয়ে আলেশা মার্ট কী করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা এখন তদন্ত করছে।
কিউকমের টাকা ফেরত দিতে জটিলতা
পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারে আটকে থাকা ৩৯৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কিউকমের ৬ হাজার ৭২১ জন গ্রাহককে ৫৯.০৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফেরত দিতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, “কোন একজন গ্রাহক হয়তো ৫ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছেন, যার মধ্যে কিছু টাকা হয়তো তিনি নিজের ওয়ালেটের বাইরে দোকান থেকে এমএফএস এর মাধ্যমে দিয়েছেন।”
“কিন্তু এসক্রো সার্ভিসের নিয়ম হলো, যে মাধ্যম থেকে গ্রাহক টাকা পরিশোধ করেছেন, ওই মাধ্যমেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এভাবে টাকা ফেরত দিলে তা গ্রাহকের বদলে বিকাশ, নগদ, রকেটের দোকানদারদের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে”, তিনি বলেন।
এ প্রেক্ষিতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, যে মাধ্যম থেকে তারা টাকা পরিশোধ করেছেন, সে মাধ্যমে ফেরত দিলে কোনো সমস্যা আছে কি-না। কোন গ্রাহকের সমস্যা না থাকলে তা ওই মাধ্যমেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
আর যে গ্রাহক এতে আপত্তি জানাচ্ছেন, তাদের বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দোকানদারসহ ফস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যে মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে দুইজনই সম্মতি দিচ্ছে, সে মাধ্যমেই টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আর এ কারণে দেরি হচ্ছে বলে জানান শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “কিউকমের সকল গ্রাহক হয় টাকা, অথবা পণ্য পাবেন। কারণ, কিউকমের ওয়্যারহাউজে ১০০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে, ফস্টারের কাছেও তাদের ৩৯৭ কোটি টাকা রয়েছে।”
তবে নির্ধারিত ৬ হাজার ৭২১ জন ছাড়া বাকি গ্রাহকদের পাওনা দিতে হলে কিউকমের সিইও রিপন মিয়ার জামিন প্রয়োজন। কারণ, গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের সব হিসাব রিপন মিয়ার কাছে।
ই-অরেঞ্জ, ধামাকার গ্রাহকদের পাওনা ফেরতের সম্ভাবনা কম
শফিকুজ্জামান বলেন, “ই-অরেঞ্জ, ধামাকাশপিংসহ যেসব ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে আমরা কোনো কাজ করছি না। এসব কোম্পানির অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাও নেই, পেমেন্ট গেটওয়েতেও গ্রাহকের অর্থ তেমন নেই। ফলে তাদের গ্রাহকদের কি হবে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।”
“যেসব কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা রয়েছে কিংবা পেমেন্ট গেটওয়েতেও কিছু টাকা আটকে আছে, আমরা চেষ্টা করছি, সেসব টাকা গ্রাহকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ই-অরেঞ্জ ও ধামাকার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা”, যোগ করেন তিনি।