নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নে স্থানীয় দালালচক্রের মাধ্যমে কৃষি জমির মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটায়। এতে পাশের কৃষি জমির মালিকরা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহস্পতিবার (০৩ এপ্রিল) ভুক্তভোগী কৃষি জমির মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে মাটি কাটার এসব চিত্র। জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রির ফলে যেমন কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। নতুন করে তৈরি হচ্ছে পুকুর। এতে কমছে ফসলি জমি, অন্যদিকে ঝুঁকির মুখে পড়ছে খনন করা পুকুরের আশপাশের আবাদি জমিগুলো।
আমদিয়া ইউনিয়নের বনবাগ মৌজার কৃষি জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, আমদিয়া ইউনিয়নের বরদিয়া গ্রামের মো. জুয়েল ও নয়ন আমার জমির পাশের জমি ৭০ হাত গর্ত করে মাটি কাটার ফলে আমার ফসলি জমি এখন গর্তে ভেঙে যাচ্ছে। আমাকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে চুরি করে কিছু জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন আমরা খুবই বিপদে আছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
একই মৌজায় জমির মালিক শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদুল্লাহ বলেন, আমি একজন অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষ। কষ্ট করে কিছু টাকা ঋণ করে জমিতে ফসল বর্গা করছি। আমার ফসলি জমির পাশ দিয়ে মাটি নেয়ার গাড়ি চলাচলের ফলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করতে গিয়ে জুয়েল ও নয়ন নামে দুই দালালের হাতে মাইরধরের শিকার হই।’
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক জামাল উদ্দিন মোল্লা জানান, মাটি কাটার ফলে আমার জমি নষ্ট হচ্ছে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানানো হয়। তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি আরও জানান, কিছু অর্থলোভী কৃষক টাকার লোভে মাটি বিক্রি করছে। একাধিক স্থানে গভীর খনন করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি ভেঙে পড়লে তখন জমিতে আর ফসল করা সম্ভব হচ্ছে না’
অভিযোগ সম্পর্কে মাটি কাটার ঠিকাদার মো. জুয়েল বলেন, জমির মালিক তার জমিতে পুকুর করছে। আমি তার দেখাশোনা করছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। প্রতিবন্ধী শাহিদুল্লাহকে মারধরের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন মাটি বহনকারী গাড়ি চলাচলে শাহিদুল্লাহ বাধা দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে ও গাড়ির ড্রাইভার তাকে ধাক্কা দেয়। পরে আমরা জানতে পেরে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মীমাংসা করে দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইদুর রহমান জানান, কৃষি জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল কাটার ফলে জমির উর্বরতা হারিয়ে বালি দেখা দেয়। এতে ফসলের বিভিন্ন জৈব উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে নিচের বালি মাটিতে আবাদ করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী মোর্শেদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।