আইকিউ যাদের বেশি, তারা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি সুবিধা পান বলে ধারণা মনে করা হয়। অনেকেরই ধারণা, তারা উন্নতমানের উচ্চশিক্ষা ও ভালো চাকরি পান। এমনকি তাদের আয়ও হয় বেশি।
তবে যাদের আইকিউ বেশি, তারা ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, দুশ্চিন্তা, এডিএইচডি, অ্যালার্জি, অ্যাজমার মতো বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক রোগেও বেশি আক্রান্ত হন। এর কারণ কী? ‘ইন্টেলিজেন্স’ জার্নালে নতুন প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এর কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে।
আমেরিকান মেনসা সোসাইটির ৩ হাজার ৭১৫ জন সদস্যের তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করেছেন এই গবেষণা নিবন্ধের লেখকেরা। এই সোসাইটির সদস্যরা বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিভাবান ব্যক্তিদের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (এএসডি) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এডিএইচডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ, দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮৩ শতাংশ এবং অন্য যেকোনো একটি মুড ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৮২ শতাংশ বেশি।
কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে গবেষকরা সাইকোনিউমারোলজির (পিএনআই) সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অত্যন্ত বুদ্ধিমানদের মধ্যে ‘অতিরিক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তেজনা’ এবং কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেমের অতি-প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রবণতা রয়েছে। এতে বেশি আইকিউ সংবলিত মানুষরা তাদের সৃষ্টিশীল ও শৈল্পিক কাজে সাহায্য পান। বস্তুত বেশি বুদ্ধিমানরা তাদের পরিপার্শ্বকে অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীরভাবে বোঝার সক্ষমতা রাখেন।
তবে এই অতি-প্রতিক্রিয়াশীলতা বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে। বিশেষ করে কবি, ঔপন্যাসিক ও অতি বুদ্ধিমানদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটে। স্মৃতি রোমন্থন ও দুশ্চিন্তা করার সময় এই শ্রেণির মানুষদের আবেগি প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। এই দুটোই ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের অন্যতম কারণ।
গবেষকরা লিখেছেন, অতিরিক্ত মানসিক প্রতিক্রিয়ায় ইমিউনিটি প্রভাবিত হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ উদ্দীপনা, যেমন কাপড়ের ট্যাগ কিংবা শব্দ অতিরিক্ত উত্তেজনাপ্রবণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হতে পারে নিম্ন স্তরের চাপ। ফলে ইমিউন রেসপন্সে দেখা দিতে পারে অনিয়ম।
শরীর যখন মনে করে সে বিপদে আছে—তা সে বিপদ প্রকৃতই হোক কি কাল্পনিকই হোক—ওই মুহূর্তেই শরীর ঝরনার মতো মানসিক প্রতিক্রিয়া নির্গত করতে থাকে। শরীর তখন অজস্র হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার প্রভৃতি নিঃসৃত করে। এ প্রক্রিয়া চালু হওয়ার সময় শরীর ও মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসতে পারে। সেইসঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে ইমিউন কার্যক্রম। এর জেরে দেখা দিতে পারে অ্যাজম, অ্যালার্জি ও অটোইমিউন রোগ।
গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, মেধাবী শিশুদের অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বেশি হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যাদের আইকিউ ১৬০-এর বেশি, তাদের ৪৪ শতাংশই সমবয়সি অন্যান্য ব্যক্তিদের চেয়ে অ্যালার্জিতে ২০ শতাংশ বেশি ভোগেন। সাম্প্রতিকতম গবেষণাতেও একই ব্যাপার দেখা গেছে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, বেশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত উত্তেজনা এই ব্যক্তিদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এর কারণ, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ঘটনার প্রতি এসব মানুষ অতি সংবেদনশীল। আবার পরক্ষণেই নতুন কোনো উদ্দীপনায় তারা অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এরকম নানামুখী আবেগ প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল থাকার কারণে প্রতিভাবানরা শারীরিক ও মানসিক রোগে ভোগেন বেশি।