খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘদিন পর কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলেছে। অব্যাহতভাবে রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধির পর অবশেষে গত মাসে এসব পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে ভোজ্যতেল ও দানাদার খাদ্যশস্যের নিম্নমুখী বাজারদর। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলে এফএওর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৫৮ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমেছে। মার্চের তুলনায় সূচক দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ওই মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এক মাসের ব্যবধানে কমলেও গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দাম ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি ছিল।
গত মাসে এফএওতে ভোজ্যতেলের মূল্যসূচক তার আগের মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। মার্চে যে মাত্রায় দাম বেড়েছিল, তাতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভারসাম্য এসেছে। পাম অয়েল, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলের মাথাপিছু চাহিদা ভোজ্যতেলের বাজারকে নিম্নমুখী চাপের মধ্যে ফেলেছে।
বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল রফতানিকারক ইন্দোনেশিয়া গত মাসে পাম অয়েল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির বাইরে অন্যান্য দেশেও রফতানি প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে ক্রেতারা বিকল্প পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন। এ কারণে ভবিষ্যতে পণ্যটির দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এফএওর বিশ্লেষকরা।
এফএওর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো কুলেন বলেন, খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম কিছুটা কমায় স্বস্তি মিলেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের খাদ্য ঘাটতিযুক্ত দেশগুলো এর সবচেয়ে বেশি সুফল পাচ্ছে। তবে খাদ্যপণ্যের দাম এখনো সাম্প্রতিক রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছিই অবস্থান করছে। এটি আগামীতে বাজারে সংকট জারি থাকার বার্তা দিচ্ছে। বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে যেসব দেশ অনেক পিছিয়ে, তাদের জন্য এমন পরিস্থিতি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এপ্রিলে এফএওতে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। দাম কমায় বড় ভূমিকা রেখেছে ভুট্টা। শস্যটির বৈশ্বিক বাজারদর কমেছে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে, যুদ্ধের প্রভাবে ইউক্রেনের বন্দরগুলো বন্ধ হয়ে পড়ায় গমের আন্তর্জাতিক বাজারদরে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন পরিস্থিতিও শস্যটির বৈশ্বিক বাজারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে ভারত বিপুল পরিমাণ গম রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রত্যাশার বেশি রফতানি করেছে রাশিয়া। শস্যটির দাম দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম মার্চের তুলনায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। মূলত চীন ও নিকট প্রাচ্যের দেশগুলোয় শক্তিশালী থাকায় শস্যটির বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
এপ্রিলে এফএওতে চিনির বৈশ্বিক মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ বিশ্লেষণ করে এফএও জানায়, বিশ্বের শীর্ষ চিনি রফতানিকারক দেশ ব্রাজিলে চলতি বছরের চিনি উৎপাদন অত্যন্ত ধীরগতিতে শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে আগে থেকেই অস্থিতিশীলতার উদ্বেগ ছিল। তার ওপর ইথানলের ঊর্ধ্বমুখী দামও মূল্যসূচক বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
তবে অন্যান্য পণ্যের উত্থান-পতনের মাত্রা স্বল্প হলেও রেকর্ড উচ্চতায় বেড়েছে মাংসের দাম। এফএওতে গত মাসের মাংসের মূল্যসূচক বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে, দুগ্ধপণ্যের দাম দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ওশেনিয়া ও পশ্চিম ইউরোপে মৌসুমে স্বাভাবিকের তুলনায় দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ সংকুচিত হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাখনের দাম।