দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য চা। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে থাকা দেশটির চা রপ্তানি গত ২৩ বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। প্রধানত সার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে এর পেছনে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি দেশটির সরকারি এক প্রতিবেদনে এমন মন্দা পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে। খবর এএফপি।
২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বীপরাষ্ট্রটি সব মিলিয়ে প্রায় ১৩০ কোটি ডলারের চা রপ্তানি করেছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির চা রপ্তানি খাত এবারই প্রথম এমন মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ল।
গত বছর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সার আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর বিপরীতে অর্গানিক উপায়ে চাসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে জোর দেয়া হয়। সার আমদানি বন্ধের পেছনে প্রধান কারণ ছিল বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করার মাধ্যমে ঋণের বোঝা লাঘব করা।
কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি। বিশেষ করে চা খাত সরকারের এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বলি হয়। গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চা উৎপাদন এক বছরের ব্যবধানে ১৮ শতাংশ কমে যায়।
শ্রীলংকার শুল্ক বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির চা রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে ৬ কোটি ৩৭ লাখ কেজিতে নেমেছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৯৮ লাখ কেজি।
শুধু তাই নয়, ১৯৯৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর এটি ছিল সর্বনিম্ন রপ্তানির রেকর্ড। ওই সময় দেশটি ৬ কোটি ৩ লাখ কেজি চা রপ্তানি করেছিল।
রপ্তানির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে শ্রীলংকা চা রপ্তানি করে ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করে। অথচ গত বছরের একই সময় আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
চা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এশিয়া সিয়াকা রপ্তানি ও আয় কমে যাওয়ার পেছনে কৃষি রাসায়নিক আমদানি বন্ধ করে দেয়াকেই দায়ী করেছে। দেশটির সরকার শতভাগ অর্গানিক কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তথ্য বলছে, সার আমদানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই চা শিল্পসহ কৃষি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে। ফলে গত বছরের অক্টোবরে দেশটির সরকার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ডলারের মজুদ কমে তলানিতে নেমে আসায় সার আমদানি বাড়াতে ব্যর্থ হয় দেশটি। ফলে নিষেধাজ্ঞা উঠলেও সার সংকট থেকে মুক্তি মেলেনি।
চা শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে শ্রীলংকার প্রায় ১০ শতাংশ চা রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যুদ্ধে লিপ্ত দেশ দুটি শ্রীলংকার সুগন্ধিযুক্ত ব্ল্যাক টির প্রধান ক্রেতা।
২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানিতেও হিমশিম খাচ্ছে।