কেরানি তৈরি করার শিক্ষা দিয়ে আসলে স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এর ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রায় আড়াই হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ফলাফলে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য ৪ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনের প্রসংসা করে মন্ত্রী বলেন, বিদ্যার পর যুক্তি, গবেষণা ও মুক্ত বুদ্ধির চর্চা এগুলোর প্রতি তিনি জোর দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ৭১ এর পরাজিত শক্তি ও দেশী- বিদেশী দোসরদের যড়যন্ত্র ও আঘাতে আমরা জাতির পিতাকে হারাবার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্ষেত্রেও আমরা বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিলাম।
দীপু মনি বলেন, শিক্ষা অর্জনের জন্য কোন শটকার্ট নেই। কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমেই শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এ জন্য আইইউবিএটি শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আইইউবিএটি তার জ্ঞান ভিত্তিক এলাকা উন্নয়ন: কমিউনিটি পর্যায়ে স্বনির্ভরতার একটি পদক্ষেপ এর আওতায় প্রতিটি গ্রাম থেকে একজন পেশামুখী গ্রাজুয়েট তৈরি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অর্থের কারণে ভর্তি নিরুৎসাহিত করা হয় না এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ৫৩০ টি উপজেলা থেকে শিক্ষার্থী বা গ্রাজুয়েট আছেন। এটি বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতিতে নিঃসন্দেহে একটি ভালো পদক্ষেপ। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামীলিগ সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং দেশে অনেক বিজ্ঞান শিক্ষা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে মান বৃদ্ধি, ও বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষায় বিনিয়োগ প্রয়োজন উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাজেটের অন্তত ৪ শতাংশ শিক্ষা খাতের জন্য। আন্তর্জাতিকভাবে সেটি ৬ শতাংশ হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ৩ শতাংশ অতিক্রম করতে পারিনি। আমাদেরকে দক্ষতাসম্পন্ন জাতি গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষা মান বাড়াতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে আমরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবো।
নতুন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা চাকরি প্রত্যাশী ও চাকরী দাতাদের চাহিদার মধ্যে বিস্তর ফারাক। অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল করার পরও সফট স্কিল না থাকায় ভাল করতে পারছে না। তাই কর্মযজ্ঞে কি প্রয়োজন তা এখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাথায় রেখে গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। তাহলেই আমাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জর্জিয়ার ককেশাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস এর বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কখা শেঞ্জেলিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আইএসি যুক্তরাজ্য এর রেজিডেন্ট জাজ ও ফিনল্যান্ডের অনারারি কনসুল জুলিয়ান ফিলিপস। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন আইইউবিএটি’র বোর্ড অব ট্রাষ্টিজ এর চেয়ারম্যান জনাব জুবের আলিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হামিদা আখতার বেগম।