জ্বালানি তেলে ৩৭ শতাংশ কর মওকুফের দাবিতে থালা বাটি হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেছে গরীব-মধ্যবিত্তরা। বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, করোনা-লকডাউন, বন্যা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই দেশের অর্থনীতি ভালো নেই। সব কিছুর দাম বাড়তি। গরীবরা ঠিক মত খেতে পায় না, মধ্যবিত্তরা খাবার কম খায়। সংসার চালাতে মা তার সন্তানকে বিক্রি করে, বাবা কিডনী বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দেয়। ঋণের চাপে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে দেশে। মূল্যস্ফিতিতে দেশের প্রতিটি জনগণ দিশেহারা। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করে মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত খবর, অতি উচ্চ হারে বৃদ্ধি করা হলো জ্বালানি তেলের মূল্য।
মানববন্ধনে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “নতুন দামে ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা করা হলো। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েও এই মূল্য প্রকৃতমূল্য নয়, সরকারের নানা প্রকার শুল্ক ও কর সহকারে মূল্য। এই মুল্যের মধ্যে শুল্ক ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রীম আয়কর ৫ শতাংশ, অগ্রীম ভ্যাট ৫ শতাংশ সহ মোট শতকরা ৩৭ শতাংশ হচ্ছে সরকারি শুল্ক ও কর। এ যেন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এক বিরাট লাভজনক ব্যবসা।
ডিজেল: প্রকৃত মূল্য ৮৩ টাকা + শুল্ক ও কর ৩১ টাকা = নতুন মূল্য ১১৪ টাকা
পেট্রোল: প্রকৃত মূল্য ৯৪ টাকা + শুল্ক ও কর ৩৬ টাকা = নতুন মূল্য ১৩০ টাকা
অকটেন: প্রকৃত মূল্য ৯৮ টাকা + শুল্ক ও কর ৩৭ টাকা = নতুন মূল্য ১৩৫ টাকা
মানববন্ধনে মুহম্মদ রাহাত বলেন, জ্বালানি তেলের এ অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক হারে বেড়েছে পরিবহণ ভাড়া। আর যেহেতু পরিবহণের সাথে দৈনন্দিন সকল মৌলিক খাত জড়িত, তাই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সকল জীবন ব্যয় কয়েকগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণের জন্য সামাল দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। এভাবে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
মুহম্মদ নুরুল শান্ত বলেন, জনগণের জন্যই রাষ্ট্র, জনগণের জন্যই সরকার। সেই জনগণকে শোষণ করে রাষ্ট্র তার লাভজনক ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারে না। আজকে যদি কোন সাধারণ ব্যবসায়ী ১০০ টাকায় ৩৭ টাকা লাভ করতো, তবে সেটাকে অতি উচ্চ লাভ হিসেবে দেখা হতো। ম্যাজিস্ট্রেট ঐ ব্যবসায়ীর ব্যবসা সিলগালা করতো, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতো। একজন সাধারণ ব্যবসায়ীর ১০০ টাকায় ৩৭ টাকা লভ্যাংশকে যদি অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়, তবে রাষ্ট্র কিভাবে কোটি কোটি জনগণের থেকে ৩৭ শতাংশ লাভে ব্যবসা করে ? এ ব্যবসা চলতে থাকলে দেশে দুর্ভিক্ষ সুনিশ্চিত, যেখানে কোটি কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের মৃত্যু অবধারিত।
মানববন্ধনে আশরাফুর সজীব বলেন, দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এ অতি লাভজনক ব্যবসা থেকে সরে আসা। জ্বালানি তেল থেকে ৩৭ শতাংশ খাজনা সদৃশ্য আয়কর ও শুল্ক বাদ দেয়া। সরকার অনেক পণ্যের থেকে শুল্ক বা কর মওকুফ করে। তাহলে জ্বালানি তেলের মত জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে জোর জবরদস্তি করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ও কর নিতে হবে ?
মানবন্ধনে বক্তারা তাদের দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের গরীর ও মধ্যবিত্ত’র বাঁচা-মরার দাবি হলো, জ্বালানি তেল শতভাগ কর ও শুল্কমুক্ত করে প্রকৃত মূল্য হিসেবে ডিজেল ৮৩ টাকা, পেট্রোল ৯৪ টাকা এবং অকটেন ৯৪ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।