যুগযুগ ধরে গাইল নামে কুটিরশিল্পজাত পণ্য তৈরির ফলে নরসিংদীর বেলাবর হাঁড়িসাংগান গ্রামের বেগুন্দীরটেক এলাকা পরিচিতি পেয়েছে গাইলপাড়া হিসেবে। এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কুটিরশিল্প পণ্য তৈরি করে বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন হাটবাজার ও মেলায়। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট ও আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গাইল নামের এই কুটিরশিল্প।
গাইল মূলত ধান ও চাল বানার জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি এক ধরনের পাত্র। বেগুন্দীরটেক এলাকার শতকরা ৯০ জনই গাইলসহ বিভিন্ন কুটিরশিল্পের মিস্ত্রি। তাই অনেকে এ এলাকাকে মিস্ত্রিপাড়া নামেও চেনেন।
বর্তমানে স্থানীয় মহাজনরা পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে চালিয়ে যাচ্ছে গাইলের ব্যবসা। রইনা, কাঁঠাল, আম, জাম, সেগুনসহ পাহাড়ি গাছ দিয়ে গাইল তৈরি করা হচ্ছে। শ্রমিকরা প্রতিটি গাইল তৈরি করে মজুরি পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৫-৬টি গাইল তৈরি করতে পারেন।
গাইল শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, শৈশবে বাবার কাছ থেকে গাইল তৈরি শিখেন, তখন ২০ টাকা মজুরি পেয়ে একটি গাইল তৈরি করতেন। এখন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি গাইল তৈরি করছেন।
আব্দুল মুন্সি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বহুবছর ধরে বেলাবর বাজনাব ইউনিয়নের হাঁড়িসাংগার গ্রামে গাইল তৈরি হচ্ছে। এই এলাকার নাম ছিল বেগুন্দীরটে। এখন সবাই এলাকাটি গাইলপাড়া হিসেবে চেনেন।
গাইল তৈরির মহাজন আব্বাছ উদ্দিন। তিনি বলেন, গাইল তৈরি অনেক কষ্টের কাজ। কিন্তু স্বল্প বেতনের কারণে শ্রমিকদের পোষায় না। গাইল ব্যবসায়ীরা আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে গাইল তৈরি করতে পারলে সুবিধা হয়। এ জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
গাইল তৈরির আরেক মহাজন আব্দুল আওয়াল বলেন, ১৯৮৫ সালের দিকে গাইল নামে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প শুরু করেন। করোনাকালীন গাইলের ব্যবসা বন্ধ ছিল। গ্রাম-গঞ্জের মেলা ও বিভিন্ন হাটবাজারে গাইলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে এ ব্যবসা বড় আকারে করতে পারছেন না। এর জন্য সরকারের সহায়তা দরকার।
হাড়িসাংগান গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই গ্রামটি ঐতিহ্য ও শিক্ষার অনে সুনাম রয়েছে। এ গ্রামের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্যাট্টোবাংলার পরিচালক, কৃষিবিদ সহ বহু শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। বাজনাব ইউনিয়নের বহুশিল্পের মাঝে গাইল শিল্প একটি পুরনো ঐহিত্য। ক্ষুদ্র ভাবে ব্যবসা করে কোন ভাবে বেঁচে আছেন এই এলাকার গাইল শ্রমিক ও মহাজনরা।
তিনি আরও বলেন, গাইল নামে এই কুটির শিল্পের পণ্য বিদেশে রপ্তানির চাহিদা রয়েছে। অর্থের অভাবে গাইল ব্যবসায়িরা তা বিদেশে পাঠাতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আওতায় প্রণোদনা পেলে বিদেশে রপ্তানি সহ গাইল শিল্পকে বৃহৎ ব্যবসায় রুপান্তিত করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি সহ হাড়িসাংগান গ্রামের এ ব্যবসায়ীরা।