আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ ৭ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহসড়কসহ পৌর শহর ছেয়ে গেছে পদপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে। কে হচ্ছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এ নিয়ে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে আজ। পদ প্রত্যাশীদের মুখে আনন্দ উচ্ছ্বাসের ভাব থাকলেও ভেতরে ভেতরে কে পাচ্ছেন কাঙ্খিত পদ এই নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা।
সম্মেলনকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশংকাও করছেন স্থানীয়রা। জেলা পুলিশ বলছে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সম্মেলনকে শান্তিপূর্ণ করতে নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।
সরেজমিন দেখা গেছে, মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে এই সম্মেলন সফল করতে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। স্টেডিয়াম হতে শুরু করে জেলখানা মোড় হয়ে জেলার শেষ সীমান্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কান্দাইল পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে আড়াই শতাধিক তোরণ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা কেন্দ্রিয় নেতাকর্মীদের স্বাগত জানানোসহ পছন্দের প্রার্থীদের পদ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে এসব তোরণ, ফেস্টুনের মাধ্যমে। নরসিংদী শহর সহ -ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সাহেপ্রতাব, পাঁচদোনা, শেখেরচর, মাধবদী ও কান্দাইল বাসস্ট্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাঁশ-ব্যানারের তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে ফেস্টুন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সম্মেলনে বিশৃঙ্খলার আশংকা করছেন দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণসহ সম্মেলন স্থলে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
জেলা আওয়ামী লীগের পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও তৃণমূল থেকে ওঠে আসা নেতাদের নাম শোনা যাচ্ছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ৭ বছর পর এবারের সম্মেলনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি পদে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সাংসদ ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন, সদর আসনের বর্তমান সাংসদ, সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন কাংখিত দুই গুরুত্বপূর্ণ পদ, এ নিয়ে জেলাজুড়ে নানা জল্পনা কল্পনা থাকলেও এই বিষয়ে ঘোষণা আসবে আজ সম্মেলন থেকে।
সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি। প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে কেন্দ্রিয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় এমপিরা উপস্থিত থাকবেন।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, আশা করি সম্মেলনকে ঘিরে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না। তারপরেও যদি কোনরকম বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হয় তাহলে জেলা পুলিশের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি জেলা পুলিশের আছে।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি জি এম তালেব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনামতে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদেরই প্রত্যাশা, আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। সম্মেলনে যারাই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে নির্বাচিত হবেন, তাদের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে আরও সুসংগঠিত করব।’
এর আগে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নজরুল ইসলাম হিরুকে সভাপতি ও আব্দুল মতিন ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ।
এই দ্বন্দ্বের জেরে ২০২০ সালের নভেম্বরে সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়াকে নিজ নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ। সেসময় সহসভাপতি জিএম তালেবকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।